রবিবার থেকে শিশুদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হবে
অনলাইন ডেস্ক: আগামী রবিবার (২০ মার্চ) থেকে সপ্তাহব্যাপী ২৬তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পালিত হতে যাচ্ছে। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। এর মাধ্যমে প্রায় চার কোটি শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমা ৫০০ মিলিগ্রাম) ভরা পেটে খাওয়ানো হবে।
বুধবার রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় আয়োজিত ২৬তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে অবহিতকরণ সভায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি কর্ম-পরিকল্পণা হচ্ছে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্যে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ছেলে মেয়েরা কৃমি রোগাক্রান্ত ছিল, বর্তমানে যা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি সবকিছু ভালোভাবে মেনে চলি তাহলে কৃমি আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মাধ্যমে একটা সমীক্ষা হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ছেলে মেয়েরা রোগাক্রান্ত ছিল। সেটা খুবই উদ্বেগজনক ছিল। পরবর্তীতে কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এখন পরীক্ষা করে দেখা গেছে ফলাফলটা কেমন। ফলাফলটি খুবই ভালো, আশাপূর্ণ। কৃমি আক্রান্ত রোগী সাত শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা মনে করি কৃমি প্রতিরোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধি আছে সেগুলো মেনে চললে কৃমি আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যাবে।
মন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। জাতির জনক ৭ মার্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, যে ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মদিন। আমরা শতবর্ষ জন্মবার্ষিকী পালন করেছি জাতির জনকের। এই মাসের ২৬ তারিখে আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কাজেই সব মিলিয়ে মার্চ মাস আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে আমরা আমাদের সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
আজ বুধবার (১৬ মার্চ) ২৬তম কৃমি নিয়ন্ত্রণ দিবস জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই কার্যক্রমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালের পহেলা নভেম্বর থেকে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় গিয়ে সেখানে ছাত্রদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়। স্কুলে ক্ষুদে ডাক্তার থাকে, অন্যান্য অভিভাবকরা থাকে, শিক্ষকরা থাকে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরাও থাকে। তাদের তত্ত্বাবধানে এই কৃমির ওষুধ ছেলেমেয়েদের খাওয়ানো হয়।
ছেলেমেয়েদের জন্য কৃমির ওষুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা এ বছর প্রায় চার কোটি ছেলেমেয়েদের কৃমির ওষুধ খাওয়াবো। সারাদেশে কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রচারকাজও চলছে।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর আগে আপনার ছেলে মেয়েদের পেট ভরে খাইয়ে আনবেন। ভরা পেটে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। তাহলে ছেলে মেয়েরা সুস্থ থাকবে, ভালো থাকবে। কৃমিতে আক্রান্ত হলে মানুষ শারীরিকভাবে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। তারা শারীরিকভাবে খর্বকায় হয়ে যায়। পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে ছেলেমেয়েদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রাখার।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে দুইটা পর্যায়ে প্রাইমারি এবং হাই স্কুল পর্যায়ে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি অনেক গ্রামগঞ্জে শিশুদের শরীর থেকে পেটের পরিধি অনেক বড় ছিল। এখন সেটা দেখা যায় না। এই পেটের পরিধি বড় হওয়ার অর্থ এই কৃমি তার শরীরের পুষ্টি ও শক্তির স্তরটা চুষে খেতো এবং অনেক ধরনের অসুখ হত। এটা গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। বিশেষ করে মা-বাবারা সচেতন না থাকার কারণে।
সচিব বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রচারের কারণে গ্রামগঞ্জের অনেক মা-বাবা সচেতন হয়েছেন। সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কৃমির বড়ি বছরের সাধারণত দুই বার খাওয়ানো হয়ে থাকে। একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে অন্তত দুইবার কৃমির বড়ি খাওয়া উচিত।