ঢাকা | মে ১১, ২০২৪ - ১:৩২ অপরাহ্ন

মেলার প্রচারে ঘাটতি, ভাড়ার টাকা উঠছে না ব্যবসায়ীদের

  • আপডেট: Thursday, March 24, 2022 - 10:55 pm

স্টাফ রিপোর্টার: মেলায় একটি স্টল দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা শেফালী বেগম। বেচাবিক্রি কেমন চলছে জানতে চাইলে হিসাবের খাতা বের করে দেখালেন তার স্টলের কর্মী কনা খাতুন। দেখা গেল, ১৭ মার্চ মেলা শুরুর পর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার বিক্রি হয়েছে। ২২ মার্চ একটা কিছুও বিক্রি হয়নি। ওই তারিখে হিসাবের খাতায় একটি ‘স্যাড ইমোজি’ এঁকে রাখা হয়েছে। কনা জানালেন, এটি তিনিই এঁকেছেন।

শেফালী পোশাক বিপণী নামের এই স্টলটির মালিক শেফালী বললেন, মেলার কোন প্রচার-প্রচারণা নেই। তাই ক্রেতার সংকট। বেচাবিক্রি নেই। ১৩ দিনের এই মেলায় অংশ নিতে ১২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে স্টল নিয়েছেন। প্রতিদিনের হিসাবে ভাড়া ৯২৩ টাকা। মেলা শুরুর পর একদিনও ৯২৩ টাকার পণ্য বিক্রি হয়নি তার স্টলে। এ অবস্থা শুধু তার একার নয়, অন্য স্টলগুলোরও একই অবস্থা।

রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠে গত ১৭ মার্চ থেকে এই ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মেলা’ শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। জেলা প্রশাসন মেলার আয়োজন করেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলছে। স্টল আছে ৭০টি। জেলা প্রশাসনের গঠন করে দেওয়া একটি কমিটি মেলার সার্বিক দায়িত্বে। এই কমিটির সদস্য সচিব উইমেন এন্টারপ্রিনিয়র অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওয়েব) রাজশাহী বিভাগের সভাপতি আঞ্জুমান আরা লিপি। তিনিই সবকিছু দেখছেন।

এই মেলা নিয়ে কোথাও তেমন কোন প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ছে না। ফলে ক্রেতারাও আসছে না। বুধবার সন্ধ্যায় মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতার অভাবে ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। ‘শৈল্পিক’ নামের একটি স্টলের সামনে গিয়ে বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মী তরনী বললেন, ‘এই তো আপনিই আজ সারাদিনের মধ্যে প্রথম স্টলের সামনে এলেন। কিছু কিনলে আপনিই হবেন প্রথম ক্রেতা।’ তিনি বলেন, ‘মেলার কোন প্রচার-প্রচারণা নেই। কোথাও মাইকিং শুনছি না। মেলা করতে হবে তাই করা। আমাদের খুব খারাপ অবস্থা।’

‘রং এর মেলা’ নামের একটি স্টলে বসেছিলেন রিয়াজ উদ্দিন জুয়েল। এটি তাঁর বোন সানজিদা পারভীনের স্টল। রিয়াজ উদ্দিন জানালেন, মেলা শুরুর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তারা কিছুই বিক্রি করতে পারেননি। শুধু তার নিজের ভাগ্নি ৮০০ টাকা দামের একটি থ্রি-পিস নিয়ে গেছে। কেনা দামেই ভাগ্নিকে থ্রি-পিসটি দিয়েছেন তিনি।

কিছুক্ষণ পর সানজিদা পারভীন এসে জানালেন, ৩ হাজার টাকা দিয়ে স্টল নিয়েছেন। বাকি টাকার জন্য কমিটির লোকজন ঘুরছেন। বিক্রি নেই বলে টাকা দিতে পারছেন না। সানজিদা বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিসমিল্লাহ বলতে পারিনি। টাকা দিব কোত্থেকে? রাজশাহীর মত জায়গায় ১২ হাজার টাকা ভাড়া খুব বেশি হয়ে গেছে। মেলার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ভাড়া কমানো উচিত। তা না হলে আমাদের মত ছোট নারী উদ্যোক্তাদের কোমর ভেঙে যাবে। মেলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ থাকবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘এই মেলার জন্য সরকারি কোন অনুদান নেই। স্টলের আয় থেকেই ব্যয় করতে হচ্ছে। স্টল করা, প্যান্ডেল করা, লাইটিংসহ অন্যান্য নানা রকমের খরচ থাকে। তাও মেলায় যদি এমন মন্দাভাব থাকে তাহলে মেলা শেষে আমরা ব্যবসায়ীদের বিষয়টা দেখব। এখনও মেলা আরও কয়দিন আছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

মেলার প্রচার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আঞ্জুমান আরা লিপি বলেন, ‘প্রচার তো হচ্ছে। শহরে মাইকিং করছি। রাস্তায় আজ ব্যান্ড পার্টি নামাব। আর ব্যবসায়ী যারা তারা ব্যবসা মন্দার কথা একটু বলেই থাকেন।’

তিনি বলেন, মেলার স্টল থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা উঠবে। এই টাকা দিয়ে খরচ মেটানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক টাকা হাতে ছোননি, দেখেননি। মেলা শেষে যদি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে সেক্ষেত্রে এই টাকা কী করা হবে তা কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে।