ঢাকা | মে ২০, ২০২৫ - ১২:২৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম

শ্রমিক সংকট ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প মালিকরা

  • আপডেট: Sunday, March 16, 2025 - 7:50 pm

অনলাইন ডেস্ক: শ্রমিক সংকট ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের তাঁত কারখানার মালিকরা। ঈদকে সামনে রেখে গ্রাহক চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত তাঁত পণ্য উৎপাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শ্রমিক ধরে রাখতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি মজুরি।

সারাদেশের মতই ঈদ বাজার ধরতে ব্যস্ততা বেড়েছে সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতপল্লিতে। বিভিন্ন নকশার শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন তাঁত শ্রমিকরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার শ্রমিক সংকটে বেগ পেতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। পাশাপাশি রং, সুতা ও বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় শাড়ি-লুঙ্গি তৈরির খরচও বেড়েছে।

‘তাঁত কুঞ্জ’  খ্যাত জেলা সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলার মধ্যে বেশি কারখানা রয়েছে বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালীসহ ৫টি উপজেলায়। জেলায় ইঞ্জিন ও হাতে চালিত চার লাখের বেশি তাঁত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত আছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের আড়ৎ এনায়েতপুর ও সোহাগপুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতা বিক্রেতাদের আগমন ঘটছে। চলছে বেচাকেনা।
তবে শ্রমিক সংকট ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরীতে হিমসিম খাচ্ছেন কারখানা মালিকরা। শ্রমিকদের কাজে আগ্রহ বাড়াতে সাপ্তাহিক হাজিরা বোনাস চালু করেছে এনায়েতপুরের খামার গ্রামের লাভলু-বাবলু কম্পোজিট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ। জেলার তাঁতপল্লিতে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা। তারা নলি ভরা, সুতা প্রস্তুত করা, মাড় দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। এই অঞ্চলের উৎপাদিত শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। ঢাকার বিভিন্ন বুটিক হাউস এসব শাড়ি-লুঙ্গি বিদেশে রপ্তানি করছে।

বেলকুচি উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের তাঁত শ্রমিক ইউসুফ আলী (২৯) বলেন, আমরা যেভাবে কাজ করি সেভাবে আমাদের বেতন নাই। ছয় দিন কাজ করলে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। মজুরি কম হওয়ায় শ্রমিকেরা আসে না। মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ চাই।

এনায়েতপুরের খামার গ্রামের তাঁত শ্রমিক আব্দুল বাতেন (৫৭) বাসসকে বলেন, ৩২ বছর ধরে তাঁতের কাজ করি। আমাদের শ্রমে ঘামে অনেকেই শিল্পপতি হয়েছেন। কিন্তু মজুরি কম দেওয়ায় আমাদের ভাগ্যের কোন উন্নতি হয়নি। তাই অনেকেই এ পেশা বদল করে অন্য কাজ করছে। বহু শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এ কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

বেলকুচি উপজেলার বেলকুচি তাঁত কারখানা মালিক আকছেদ আলী বলেন, তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এ জেলায় এবছর ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন নকশার জামদানি, দেবদাস, কটন জামদানি, হাফ সিল্ক, কাতানসহ শাড়ি ও লুঙ্গি উৎপাদন হচ্ছে। এ অঞ্চলের শাড়ি, লুঙ্গি  ও থ্রি পিছের দেশীয় হাট বাজারসহ ভারতের বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, রং ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এ জন্য এবছর খুব একটা লাভবান হতে পারছি না।

এনায়েতপুরের খামার গ্রামের লাভলু-বাবলু কম্পোজিট টেক্সটাইলের ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, জেলায় ৪ লাখের ওপরে তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে যে কাপড় উৎপাদন হয় তা সারাদেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আসন্ন ঈদে এ অঞ্চল থেকে ৯ হাজার কোটি টাকার কাপড় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ভাল শাড়ি তৈরি করি। এই শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

ফিরোজ উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক ফিরোজ হাসান অনিক ও হাজী ফারুক হোসেন বলেন, শ্রমিকরা দিন রাত পরিশ্রম করছে। তারা বাহারী রঙ্গের শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছে। রং ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। গত বছর ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়েছে। এবারও চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুস ছামাদ খান বাসসকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জসহ দেশের তাঁত শিল্প শ্রমিক ও মালিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত শাড়ির সুনাম দেশ জুড়ে রয়েছে। এই শিল্পের প্রসার ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সমিতির পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS