ঢাকা | নভেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১১:৫৪ অপরাহ্ন

দুই কৃষকের আত্মহত্যা: কৃষকলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবি কৃষকদলের

  • আপডেট: Wednesday, March 30, 2022 - 10:17 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামে সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করা দুই সাঁওতাল কৃষকের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্তনা দিয়েছেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। এ সময় তাঁরা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, যুগ্ম সম্পাদক ও বগুড়া-৬ আসনের সাংসদ মোশারফ হোসেন নিমঘুটু গ্রামে ওই দুই কৃষকের বাড়ি যান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন, রায়হানুল আলম রায়হান, জেলা কৃষক দলের আহবায়ক আল আমিন সরকার টিটু, রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক ওয়াদদু হাসান পিন্টু, জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব নাজমুল হক প্রমুখ।

তাদের দেখে মৃত কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম কান্নায় ভেঙে পড়েন। নেতারা দুই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন। এ সময় কৃষকদল সভাপতি হাসান জাফরী তুহিন বলেন, এই কৃষকেরা ১২ দিন ধরে জমিতে পানি চাইলেও অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন তা দেননি। তিনি পানির পরিবর্তে বিষ খাওয়ার কথা বলেন। তার প্ররোচনায় দুই কৃষক বিষপান করেন। তাই অবিলম্বে সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, সাখাওয়াত ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি হওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এখন আবার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে এই অবস্থা বিরাজ করছে। কেউ এখন ভাল নেই।

দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের গঠন করে দেওয়া তদন্ত কমিটির সদস্যরা আগের দিন নিমঘুটু যান। তাদের কাছে পরিবার ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কৃষকেরা অভিযোগ করেন, জমিতে সেচের পানি না দেওয়ার কারণে দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এখন পরিবার দুটি বেকায়দায় পড়েছে। তাদের ঘরে খাবার নেই। প্রতিবেশীরা বাড়ি বাড়ি চাল তুলে অভিনাথের স্ত্রীকে দিচ্ছেন। তা দিয়ে তিনি দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন।

এই করুণ কাহিনী শুনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) আবু জুবাইর হোসেন বাবলু কিছু খাদ্য সহায়তা করার জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। বুধবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম নিমঘুটু গ্রামে গিয়ে দুই পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আসেন। ইউএনও জানান, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল নগদ টাকা ও খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছেন।

গত ২১ মার্চ সোমবার রবি ও অভিনাথ বিষপান করেন। সেদিনই বাড়িতে অভিনাথের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ মার্চ মারা যান রবি। মৃত্যুসনদে বলা হয়েছে বিষক্রিয়ায় রবির মৃত্যু হয়েছে। দুই কৃষকের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তবে প্রতিবেদন হয়নি। তাদের মৃত্যুর জন্য গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে দায়ী করে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। দুই কৃষকের বিষপানের পর থেকেই পরিবার দুটি সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও তাকে আটক করা হয়নি। তিনি পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।

প্রথম মামলাটি হওয়ার পর সাখাওয়াত পালিয়েছেন। পুলিশ তাঁকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। গোদাগাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বুধবার বিকালে বলেন, সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।