ঢাকা | অক্টোবর ১২, ২০২৪ - ৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

  • আপডেট: Monday, September 30, 2024 - 10:00 pm

সোনালী ডেস্ক: আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত উত্তরাঞ্চলের লালমনির হাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলা। তিস্তা, ঘাট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদ-নদী বিধৌত রংপুর অঞ্চলের এসব জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও তিস্তার পানি বিপৎসীমা উপচে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ঢুকে পড়েছে। বন্যার সঙ্গে কোথাও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।

সোমবার পর্যন্ত পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে উঠতি আমন ধানসহ আবাদি জমির শাক-সবজি ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। প্লাবিত পাঁচ জেলার নদ-নদীর কূলঘেঁষা চর ও চরদ্বীপসহ লোকালয়ের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে পদ্মা নদীর পানি বাড়লেও, এখনো তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ বিভাগে আত্রাই, বাঙ্গালি, করতোয়া ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বেড়েছে তিস্তা নদীর পানি। এরই ইতিমধ্যেই দুই দফায় গজলডোবা বাঁধ দিয়ে প্রায় ১১ হাজার কিউমেক পানি ছেড়েছে ভারত। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারত যে বাড়তি পানি ছেড়েছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে অফিশিয়াল কোনো খবর নেই।

জানা গেছে, অসময়ে উত্তরের ৫ জেলায় ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর পানি এভাবে বাড়তে থাকলে সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি উঠেছে। এরই মধ্যে ৫ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা নদীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে চলেছে। তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, তিস্তার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত রবিবার সকালে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। ইতিমধ্যে ব্যারাজের সবগুলো কপাট খুলে দেয়া হয়েছে।

মূলত, ভারতে তিস্তা নদীর ওপর একাধিক বাঁধ আছে। তার মাঝে একটি হল জলপাইগুড়ির গজলডোবা বাঁধ। গজলডোবা বাঁধ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত ৮টায় প্রায় ছয় হাজার ও তারপরে রাত সাড়ে ১২টায় আরও ৪ হাজার ৭০০ কিউমেকের বেশি পানি ছাড়া হয়েছে। এরপরে আর নতুন করে পানি ছাড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বাঁধের কিছু কবাট বছরের একটা বড় সময়ই খোলা থাকে। যখন কোনো কারণে পানির পরিমাণ বাঁধের ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন সেই বাড়তি পানি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাঁধের আরও গেট খুলে দেয়া হয়।

গজলডোবা বাঁধ দিয়ে হঠাৎ করে এত বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সেচ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের মতো ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলায়ও তিন দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর ভারতের অংশের বেশ কয়েকটি জায়গায় পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং বাঁধের পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ওই পানি বের করার জন্য এক পর্যায়ে আরও গেট খুলতে হয়েছে। গত শুক্রবার কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত নদীর দুই তীরেই লাল সতর্কতা জারি হয়েছিল। গত শনিবার মাঝরাতে মেখলিগঞ্জের উজান অঞ্চলেও লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

অপরদিকে, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি কমে আগামী ৩ দিনে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গতকাল সোমবার দুপুরে বলেন, গতকাল (রোববার) তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল, সেটি আজ (সোমবার) ডালিয়া এবং কাউনিয়া দুই পয়েন্টেই নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি কমছে। অন্যদিকে ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছ। তবে উজানে পদ্মার পানি বাড়লেও সেটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে বুলেটিনে বলা হয়, রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আগামী ৩ দিন তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমতে পারে।

তাতে করে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদী- আত্রাই, পূনর্ভবা, করতোয়া, টাঙ্গন ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি কমছে। ইছামতি-যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি সমতল বাড়ছে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর বিভাগের এসব নদীর পানি আগামী তিন দিন কমতে পারে।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৫ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ওদিকে রাজশাহী বিভাগে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে, তবে তা এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ বিভাগে আত্রাই, বাঙ্গালি, করতোয়া ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অঞ্চলের খোয়াই ও যাদুকাটা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও সারিগোয়াইন ও কংস নদীতে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে আছে বলে বুলেটিনে বলা হয়েছে।