ঢাকা | মে ১৭, ২০২৪ - ১২:৩২ অপরাহ্ন

অঢেল অবৈধ সম্পদ || স্ত্রী-শাশুড়িসহ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

  • আপডেট: Thursday, June 15, 2023 - 7:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলায় সৈয়দ আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শাশুড়ি কারিমা খাতুনকেও আসামি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলা করা হয়। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ বাদী হয়ে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে সোয়া ১৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের নামে প্রায় তিন কোটি আট লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে।

এছাড়া সাবেক ওসি সৈয়দ আব্দুল্লাহর নামে দুইটি প্লট, স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে রাজধানীতে দুইটি ফ্ল্যাট, একটি বাণিজ্যিক স্পেস, শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানের তদারককারী কর্মকর্তা ও পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ গোলাম মাওলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ফেনী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ক্রাইম শাখার পুলিশ পরিদর্শক ও সাবেক ওসি সৈয়দ আব্দুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশে স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে দুইটি পরিচয়পত্র তৈরি করেন। পাশাপাশি স্ত্রীর নামে পৃথক দুইটি ট্যাক্স শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ করেন।

এগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫ টাকা জমা রাখেন। এছাড়াও এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩১ লাখ টাকায় গাড়ি কেনাসহ মোট তিন কোটি সাত লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ কেনেন।

এছাড়া নিজের নামে দুইটি প্লট, স্ত্রীর নামে দুইটি আবাসিক ফ্ল্যাট, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ পরিশোধ করে শাশুড়ির নামে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট কেনেন। সব মিলিয়ে মোট ১৫ কোটি ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩২ টাকার অধিক মূল্যের স্থাবর সম্পদ কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে এসব স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ১৮ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামি সৈয়দ আব্দুল্লাহ পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে অসাধু উপায়ে নিজের নাম, স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে সম্পদ গড়েছেন।

প্রকৃতপক্ষে তিনি অর্থের উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করার চেষ্টা করেছেন। এসব কাজে তার স্ত্রী ও শাশুড়ি সরাসরি সহযোগিতা করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

অনুসন্ধানকালে অর্থাৎ চলতি বছরের ২৮ মে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের আদেশে সৈয়দ আব্দুল্লাহর ১৮ কোটি ১৬ হাজার ৫৬৩ টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামের ট্যাক্স ফাইলগুলো জব্দ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে মামলায় দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪২০/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২), ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আব্দুল্লাহর শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নামে গুলশানে তিন হাজার ৯০৯ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। স্ত্রী ফারহানা আক্তারে নামে কাকরাইলে দুই হাজার ১২০ বর্গফুটের বাণিজ্যিক স্পেস ও ২৬৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিংসহ মোট দুই হাজার ৩৮৬ বর্গফুট স্পেস রয়েছে।

ঢাকার বড় মগবাজারে দুই হাজার ১৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও গাড়ি পার্কিং, খিলগাঁওয়ের পশ্চিম নন্দীপাড়ায় দুই হাজার বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট ও গ্যারেজ রয়েছে। এছাড়া সৈয়দ আব্দুল্লাহর নামে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে ছয় কাঠার দুইটি প্লট রয়েছে।

একই সঙ্গে স্ত্রী ফারহানা আক্তারের নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র, ফিনিক্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত, খুলনার অগ্রণী ব্যাংকের বয়রা বাজার শাখায় ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে।

ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিজয়নগর শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিস শাখা ও বয়রা বাজার শাখা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোড শাখা, সোনালী ব্যাংকের ভিকারুননিসা নূন স্কুল শাখা এবং খুলনার স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে আমানত হিসেবে ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৪ টাকার তথ্য রয়েছে।

সোনালী/জেআর