ঢাকা | জুন ২১, ২০২৫ - ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

নৌকার বিরুদ্ধে লিটনের ভূমিকা উঠে এলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকে

  • আপডেট: Friday, May 24, 2024 - 3:00 am

ডেস্ক রিপোর্ট: গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের নৌকার বিপক্ষে নেতিবাচক ভূমিকা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে।

জোটের শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে শরিকদের পক্ষ থেকে এই প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপিত হয়।

বলা হয়, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হলেও ফজলে হোসেন বাদশাকে হারাতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন মেয়র লিটন। বৈঠকে হাসানুল হক ইনু ও নজিবুল বশর মাইউভাণ্ডারির বিপক্ষেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৎপরতা আলোচনায় আসে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জোটের প্রয়োজন বা এখনও প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা, সেই প্রশ্নও রেখেছেন জোট শরিকরা। তবে শরিকদের আশ্বস্ত করে তাদের নেত্রী বলেছেন, জোট আছে, জোট থাকবে। শরিক দলগুলোকে দলীয় তৎপরতা বাড়িয়ে নিজেদের জনপ্রিয় ও সংগঠিত হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন জোটনেত্রী।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ১৪ দলের জোটগত তৎপরতা তলানিতে ঠেকা, শরিকদের অবমূল্যান করা, জোট নেতাদের নিয়মিত বৈঠক না হওয়া এবং শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি ও ভোটব্যাংক ছোট করে দেখাসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ শীর্ষ নেতারা।

সেই সঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজন বা প্রাসঙ্গিকতা এখনও আছে কিনা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন তারা।

জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে রাশেদ খান মেনন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল, সেটি এখন ম্রিয়মাণ। কীভাবে এই জোট আগামীতে কার্যকর করা হবে এবং দেশে বেড়ে চলা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করা হবে, নতুন করে তা ঠিক করতে হবে।

বৈঠকে জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শরিকদের অবজ্ঞা ও অবমূল্যায়নের অভিযোগ করেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, এক/এগারোর সময় আওয়ামী লীগের অনেকে শেখ হাসিনার পাশে না থাকলেও ১৪ দলের শরিকেরা ছিল। তাদের এখন আগের মতো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। জোটের প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা, থাকলে জোটকে আরও সক্রিয় করতে হবে।

তারা ১৪ দলের শীর্ষ নেতা ফজলে হোসেন বাদশা, হাসানুল হক ইনু ও মাইজভাণ্ডারীর আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করেন।

সূত্রমতে, বৈঠকে জামায়াতে ইসলামিকে চাপে রাখতে মামলা করাসহ নিজ দলের অবদান তুলে ধরে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ এখন তার সেই অবদান ভুলে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘কিংস পার্টি’ খ্যাত দলগুলোকে সামনে নিয়ে আসা এবং দুর্দিনে সঙ্গী হওয়া ১৪ দলের শরিক দলকে অবমূল্যায়ন করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে আসন ছাড় দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দিলীপ বড়ুয়া। জোটনেত্রীকে তিনি বলেন, আপনি আমাদের ভোট ব্যাংকের কথা বলছেন, জেনারেল ইব্রাহিমের কী ভোট আছে? তার ভোট হাটহাজারিতে থাকলেও চকরিয়ার (কক্সবাজার-১) এমপি হলো কীভাবে?

১৪ দলের শরিকদের ভোট ব্যাংক কেমন আছে, তা দেখেই জোট করা হয়েছিল। তখন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা না হলেও এখন কেন তা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে? রাজনৈতিক ঐক্যমতে আগে গুরুত্ব দেয়া হলেও এখন শরিকদের সাংগঠনিক শক্তি তুলনা করা হচ্ছে। আদর্শের ভিত্তিতে করা জোটে ভোট এবং শক্তির বিষয়টি সামনে আসবে কেন?

বৈঠকে ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ভূমিকা নিয়েও কিছুটা অসন্তোষ উঠে আসে তাদের কথায়। তাকে জোটের ব্যাপারে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথাও বলেন তারা। বৈঠকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপসহ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকি মোকাবিলায় ১৪ দলকে আরও সক্রিয় করার দাবি জানান নেতারা।

তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ বা কাউকে দোষারোপ না করে নিজ নিজ দলের শক্তি বাড়ালে জোটের শক্তিও বাড়বে। আর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের ব্যবসা করা হবে না বলেও জানান তিনি।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, জোটের স্ব স্ব দলকে আরও সংগঠিত এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ১৪ দলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বৈঠকের পর ১৪ দলের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা থাকবে না বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচন করে তাকে হারানোর ব্যবস্থা করেছে। রাজশাহীতেও ফজলে হোসেন বাদশাকে আওয়ামী লীগের এক নেতা হারিয়েছে। এই অসহযোগিতার পরেও বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ভোটের ব্যবধান খুব বেশি নয়।

মেনন বলেন, মাইজভান্ডারির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এইসব ক্ষেত্রে ১৪ দলের নেতাদের যদি পাশে না নেন তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম এবং ঐক্যবদ্ধ থেকেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

গণভবনে বৈঠকের আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে জোটের শরিক দলের কয়েকজন নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন বলেও জানা গেছে। তারা জোটের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া এবং ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন আগামীতে আওয়ামী লীগ না থাকলেও তারা জোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করবেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS