ঢাকা | মার্চ ৬, ২০২৫ - ৩:৩২ অপরাহ্ন

নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

  • আপডেট: Thursday, March 6, 2025 - 12:48 am

পাবনা প্রতিনিধি: পাবনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক প্রসূতির প্রসবকালে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, গর্ভে থাকতেই নবজাতক মারা গিয়েছিল।

গত মঙ্গলবার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জ্যেষ্ঠ গাইনি চিকিৎসক নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করেনি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী হাসপাতালের লেবার গাইনি ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভুক্তভোগী নারী পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাইপ্রবাসী রমজান খাঁর স্ত্রী শিউলী খাতুন (৩৫)। দুই সন্তানের জননী শিউলী খাতুন তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করছিলেন।

হাসপাতাল ও রোগীর পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গর্ভবতী মা প্রথম থেকেই পাবনার গাইনি চিকিৎসক শাহীন ফেরদৌস শানুর নিয়মিত রোগী ছিলেন। হঠাৎ ভোররাতে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সেহরির পরপরই ডা. শানুর শহরের বাসার চেম্বারে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক তাকে দেখে অবস্থা জটিল মনে করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।

এ সময় রোগীর স্বজনেরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তির পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক দীপা মর্জিনা রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা করে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানান। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাচ্চা মৃত সেটি পরে জানতে পেরেছেন তারা। পরে হাসপাতালের ধাত্রী নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা বের করা হয়।

ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান বলেন, রোগীর অবস্থা এখন ভালো আছে। গাইনি চিকিৎসক নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে। এরপরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সহকারী পরিচালক আরও বলেন, রাতে বা সকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ডেলিভারির কাজটি করা উচিত ছিল। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ যারা ছিলেন, তাদের আমি ডেকে পাঠিয়েছি। সকলের সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী হয়েছিল।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) জাহিদুল ইসলাম ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা মাসুর। ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্গিস সুলতালা বলেন, বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা বিষয়টি নিয়ে মায়ের পরিপূর্ণ সেবা প্রদানসহ তার জন্য কী কী করণীয় সেটির ব্যবস্থা করছি। এই নারীর পেটে যে বাচ্চা ছিল, সেটি মৃত অবস্থা ছিল। মৃত বাচ্চা নিয়েই তিনি এখানে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পেটের বাচ্চার বয়স পরিপূর্ণ ছিল না। সবেমাত্র সাত মাসে পড়েছে।

সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেই মায়ের পেটের ও জরায়ুর অবস্থা দেখে বাচ্চা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের। মেয়েটি গর্ভকালীন সময় থেকেই ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা ছিল। নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করতেন। ভুক্তভোগী নারীর পেটে পানির পরিমাণ খুবই কম ছিল। এটি একটি বিরল ঘটনা। ডা. নার্গিস সুলতানা আরও বলেন, পেটে থাকা মৃত শিশুটির বয়স কম হওয়াতে তার শরীরের কোনো কিছুই শক্ত ছিল না।

এমনকি ওই শিশুটির দেহের মাথার অংশ পেটের ওপরে ও পা নিচের দিকে ছিল। নরমাল প্রসব করানোর সময় সেবিকারা জোরে টান দিলে ঘাড় থেকে মাথা ছিঁড়ে যায়। পরে সিজার করে তাঁর পেট থেকে মৃত শিশুর অবশিষ্ট অংশ মাথা বের করা হয়েছে। এই ঘটনা কেন হয়েছে কোনো অসাবধানতা ছিল কি না, সেটি তদন্ত করে দেখছি আমরা। কোনো রকমে অবহেলা করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।