ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ১১:২৩ অপরাহ্ন

চিনা মুরগীর খামারের আয় দিয়ে চলে আনেছার সংসার

  • আপডেট: Wednesday, April 6, 2022 - 10:58 pm

এম এম মামুন, নাটোর থেকে ফিরে: পাঁচ বছর আগে দুর্ঘটনায় স্বামী পঙ্গু হওয়ার পর আনেছা বেগমের সংসারে অভাব পিছু ছাড়ছিলনা। এক সময় বাড়িতেই চিনা মুরগীর ছোট খামার গড়ে তোলেন আনেছা বেগম। ওই খামারের ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। আনেছা বেগমের বাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের তেড়াবাড়িয়া গ্রামে।

জানা যায়, ভ্যানচালক স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের আয়েই ছেলে মেয়ে নিয়ে আনেছা বেগমের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু প্রায় ৫ বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের সুখের সংসার লন্ডভন্ড হয়ে যায়। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক দুর্বিষহ জীবন নেমে আসে আনেছার সংসারে। স্বামী চার ছেলে ও এক মেয়ের সংসারের হাল ধরেন আনেছা বেগম। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ নেন।

তার আয়ে সংসারের খরচ মেটানোসহ স্বামীর চিকিৎসাও করতে থাকেন কোন মতে। খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হয় তাদের দিনের পর দিন। এক প্রতিবেশীর পরামর্শে চাঁচকৈড় হাট থেকে একজোড়া তিতির জাতের চিনা মুরগী কিনে আনেন আনেছা বেগম। শুাং করেন চিনা মুরগী লালন পালন। ছয় মাস যেতে না যেতেই ওই চিনা মুরগী ডিম দিতে শুরু করে। ওই ডিম থেকে বাচ্চা উঠিয়ে মুরগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক সময় বাড়িতেই চিনা মুরগীর ছোট খাটো খামার গড়ে তোলেন আনেছা বেগম। ওই খামারের চিনা মুরগীর ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করেই এখন চলছে আনেছার সংসার।

আনেছা বেগম জানান, তার খামারে বর্তমানে ৭০টি চিনা মুরগী আছে। গত মাসে ২৫০ টি মুরগীর বাচ্চা বিক্রি করেছেন। ওই টাকা তিনি ব্যাংকে জমা করেছেন। এই চিনা মুরগীর এক হালি ডিম ২শ টাকায় অথাৎ একটি ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিটি বাচ্চা ২শ টাকা করে বিক্রি হয়।

বড় এক জোড়া মুরগী ১৬শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মাংসের জন্য ওজন ভেদে বড় মুরগী বিক্রয় হয় ৮ শত থেকে ১ হাজার টাকা। চিনা মুরগীর মাংস সুস্বাদু বলে অনেকে খামারেই কিনতে আসেন। দুর দুরান্ত থেকে কিছু পাইকার ডিম বাচ্চা মুরগী কিনার জন্য খামারে আসেন। খামার থেকে প্রতিমাসে আয় হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই দিয়েই সংসার চলে তার। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যে তার খামারে এসে পরামর্শ দিয়ে যান। চিনা মুরগী পালন করেই এখন তার সংসার খুব ভালভাবেই চলছে।

তবে মুরগীর জন্য শক্ত ঘর তৈরি করতে না পেরে মুরগী পালন ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে। এ কারণে খামারে মুরগীর বাচ্চা ওঠানোর পরপরই তা বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। স্বামী, ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে এখন ১ ছেলে ও ১ মেয়ে তার সাথে থাকেন। মেয়েটা স্কুলে পড়ালেখা করে। জেলা শহরের ভাল স্কুলে পড়ার খুব ইচ্ছা তার মেয়ের। তিনি তার মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরের ভাল স্কুলে পড়ালেখা করাবেন বলে জানান তিনি। এখন আর খাবারের কষ্ট নেই। তবে মুরগীর খাবার ও ঘর নিয়ে দুঃচিন্তায় আছি। সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা বা সহজ কিস্তিতে ঋণ পেলে খামারটি বড় করার ইচ্ছা রয়েছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইফতেখার বলেন, তিতির জাতের চিনামুরগী পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই। দেশী মুরগীর মতই ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় বা খামার পদ্ধতিতে দুইভাবেই পালন করা যায়। চিনা মুরগী পালনে আগ্রহীদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব ধরনের পরার্মশ ও সহযোগিতা করে থাকেন।