রাজশাহীতে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন
স্টাফ রিপোর্টার: চৈত্র্যের খরতাপে পুড়ছে রাজশাহী। আর এখনই শুরু হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীতে চাহিদার তুলনায় ২০ থেকে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগকে করতে হচ্ছে লোডশেডিং। তীব্র গরমের মধ্যে এই লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর জনজীবন।
রাজশাহী শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। আর গ্রামে নেসকোর পাশাপাশি রাজশাহী ও নাটোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। নেসকো ও পল্লি বিদ্যুতের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
রাজশাহী নেসকো জানিয়েছে, সোমবার তাদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৭ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৬১ মেগাওয়াট। বাকি ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সময়কে লোডশেডিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে দিনের অন্য সময়গুলোতেও লোডশেডিং হয়েছে।
নাটোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ সোমবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭৭ মেগাওয়াট। এরমধ্যে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৬১ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। বাকি সাড়ে ১৫ মেগাওয়াট সারাদিনে লোডশেডিং করতে হয়েছে। পল্লি বিদ্যুৎ এখন কখন যাচ্ছে, কখন আসছে তার ঠিক নেই। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচের অভাবে মাঠে কৃষকের বোরো ধান নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে রাজশাহী শহরে লোডশেডিং ছাড়াও উন্নয়নমূলক কাজের জন্যও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারই শহরের বুধপাড়া-মেহেরচণ্ডি এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। উন্নয়ন কাজের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করলে নেসকো আগাম নোটিশ প্রকাশ করে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের জন্য আগাম কোন বার্তা দেওয়ার সুযোগ নেই। শহরের সব এলাকাতেই যখন-তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খরতাপের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে মানুষের নাভিশ^াস উঠছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেদিন ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দিন শুরু হলেও দুপুর ২টায় তাপমাত্রার পারদ ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমন তাপমাত্রায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ হওয়ায় গরমে হাঁসফাস করছেন মানুষ।
নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার শেখ বলেন, ‘এই রোজার দিনে লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু পর পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। নামাজ পড়ার সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ইফতার কিংবা সেহরীর সময়ও লোডশেডিং হচ্ছে। রোজাদার মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা দরকার।
লোডশেডিং নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলম সোমবার রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘সরবরাহের উপর নির্ভর করে পর্যায়ক্রমে যেন বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করা হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গুজব না ছড়িয়ে বা ধারণা প্রসূত বক্তব্য না দিয়ে বাস্তবতা মেনে আচরণ করাই একজন আদর্শ নাগরিকের দায়িত্ব। আশা করছি এই অবস্থার উন্নতি দ্রুত হবে।’ এই লেখার সঙ্গে শাহরিয়ার আলম নাটোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জুড়ে দিয়েছেন।
এতে লেখা রয়েছে, ‘দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আবার একই সময়ে রমজান মাস শুরু ও তীব্র গরম আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সন্ধ্যাকালীন সময়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। রোজার সময়ে এই কষ্টের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
নেসকোর রাজশাহীর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা এখন চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। তাই পর্যায়ক্রমে সব এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায় অবগত। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা আমি বলতে পারছি না।