ঢাকা | নভেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাজেট ঘোষণা

  • আপডেট: Wednesday, November 15, 2023 - 9:59 pm

স্টাফ রির্পোটার: আয়-ব্যয় সমান রেখে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের হল রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এক হাজার ১৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ১০০ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৩ টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে শেষ পর্যন্ত এর আকার দাঁড়িয়েছে ৬১৮ কোটি ১১ লাখ ২ হাজার ২১০ টাকায়।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র লিটন বলেন, আগামীতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে সম্পূর্ণ বাস্তবতার নিরিখে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রেখে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামীতে আমি ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব কমিয়ে ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায় করবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সাল নাগাদ দেশ হবে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ। সেই পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্মার্ট রাজশাহী বিনির্মাণেও এক চুক্তি সই হয়েছে।

এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। যা আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাজশাহীই হবে দেশের প্রথম স্মার্ট মহানগর। এছাড়া যানজট নিরসনে আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার ও একটি ট্যানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন জানান, দুই হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরের সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর উন্নয়নে এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ৮১৬ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দ করা অর্থের মধ্যে থেকে ইতিমধ্যে এক হাজার ২২০ কোটি টাকা অবমুক্ত হয়েছে। বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রকল্পে সরকার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রকল্পের চলমান কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ।

রাজশাহী মহানগরের যানজট নিরসনে ৫টি ফ্লাইওভার ও একটি টানেল নির্মাণ করা হবে। নতুন বিলসিমলা, বন্ধগেট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে ফ্লাইওভার নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভদ্রা মোড়ে অত্যাধুনিক টানেল নির্মাণের নকশা প্রণয়ন কাজ চলছে। ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় থেকে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ছয়লেন সড়ক নির্মাণ চলছে। ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝে থাকবে দুই মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুইপাশে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচলের জন্য ১০ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। নিরাপদে চলাচলের জন্য সড়কের উভয়পাশে থাকবে তিন মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও তিন মিটার প্রশস্ত ফুটপাত ও ড্রেন। ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুইলেন সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ৩ দশমিক ৫৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি ২৪ দশমিক ২০ মিটার প্রশস্ত করা হয়েছে। উভয়পাশে ৭ দশমিক ৩০ মিটার রাস্তা, রাস্তার উভয় পাশের ১ দশমিক ২০ মিটার ড্রেন ও ফুটপাত, ফুটপাত ও ড্রেনের উভয়পাশে ৩ মিটার করে ৬ মিটার স্লো মুভিং ভিহেকেল রাস্তা, রাস্তার মাঝে ১ দশমিক ২০ মিটার ডিভাইডার নির্মাণ হয়েছে। ফলে ওই সড়কটি মহানগরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন হয়েছে। মেয়র লিটন আরও জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজ চলছে। ৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন হয়ে বর্তমান অর্থ বছরে ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে।

আলোকায়ন ব্যবস্থার সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, রাজশাহী মহানগরের আলোকায়ন ব্যবস্থা আরও আধুনিকায়ন, রাতে নাগরিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে মহানগরের ১৭টি চত্বরে ১৮টি আধুনিক মানের সুউচ্চ বিদ্যুৎ লাইটের পোল স্থাপন করা হয়েছে। তালাইমারী মোড় থেকে আলুপট্টি পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার সড়কের আইল্যান্ডে বসানো হয় ১৩০টি আধুনিক সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন পোল। প্রতিটি পোলের মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক লাইট। এছাড়া সড়ক সংলগ্ন বাঁধে স্থাপন করা হয়েছে ১৮০টি আধুনিক সুদৃশ্য গার্ডেন লাইটের পোল। প্রতিটি পোলে রয়েছে ৫টি অত্যাধুনিক লাইট। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে ও নিভে।

রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের লক্ষ্য জানিয়ে মেয়র বলেন, বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে শাহ মখদুম বিমানবন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও নবরুপায়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান টার্মিনাল ভবন নবরূপায়ন, সম্প্রসারণ ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রবর্তন করা হবে। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা রাজশাহী মহানগরের একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ‘নভোথিয়েটার’ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

ইতিমধ্যে রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। এরমধ্যে বিসিক কর্তৃক বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পটি রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কেচুয়াতৈল এলাকায় ৫০ একর জায়গায় ১৭২ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপকে রাজশাহীতে বিনিয়োগে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক পুরোপুরি চালু হলে সেখানে ১৪ হাজারের অধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। মেয়র লিটন জানান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সম্প্রসারণের কল্পে ৩১৭.১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করা যায় অতি দ্রুত এই বিষয়ে সরকারি অনুমোদন পাওয়া যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাজেট প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম, ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ১ নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর তাহেরা খাতুন, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মমিন, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল জামান, বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান। সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু।

মঞ্চে রাসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব আল মাহমুদ রনি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু-সালেহ নূর-ঈ-সাইদ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন ডলার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজামুল হোদা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সোনালী/জেআর