রহস্য উদঘাটন || বিয়ের চাপ দেয়ায় পরকীয়া প্রেমিকাকে নির্মম হত্যা
অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ কোনাখোলা এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। নারীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতের নাম মো. শহীদুল ইসলাম (৩৮)।
পুলিশ বলছে, নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে নিহত নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে ঘাতক শহিদুল। কিন্তু হঠাৎ করে বিয়ের চাপ দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে কেরানীগঞ্জ নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও হত্যা করে পালিয়ে যায় ঘাতক প্রেমিক।
মঙ্গলবার দুপুরে পুরান ঢাকার জনসন রোডে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এসপি মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, গত ১১ জুন রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে অজ্ঞাত এক নারীর গলায় ওড়না প্যাঁচানো মরদেহ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরে সিআইডির ক্রাইম সিনের সহায়তায় নারীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
জানা যায়, নারী নাম সালমা বেগম (৩৭)। তিনি খুলনা সরদরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পরে পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যায় জড়িত ঘাতকের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে সোমবার মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পশ্চিম মাসদাইর এলাকা থেকে শহীদুল ইসলামকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় হত্যা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, নিহত সালমার সঙ্গে ঘাতক শহিদুলের সাত থেকে আট বছর ধরে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। হত্যার এক দিন আগে সালমা খুলনা থেকে শহিদুলের বরিশালের হিজলাউ গ্রামের বাড়িতে যায়। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সালমা জানতে পারে, প্রেমিক শহিদুল বিবাহিত এবং তার স্ত্রী বরিশালে গ্রামের বাড়িতে থাকে। এ তথ্য জানার পর সালমা তাৎক্ষণিকভাবে শহিদুলকে ফোন করে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সালমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। যদিও সালমা ডিভোর্সি এবং তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়ে আছে।
পরে শহিদুল সালমাকে কৌশলে ঢাকায় আসতে বলে। ঢাকায় আসার পর শহিদুল সালমার সঙ্গে ১১ জুন বিকেল ৫টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা করে। রাত ১০টার দিকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সালমাকে কেরাণীগঞ্জে কোনাবাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে শহিদুল জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে প্রথমে সালমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর সালমার শরীরে থাকা ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর সালমার মৃতদেহ যাতে শনাক্ত করা না যায় সেজন্য পাশে থাকা ইটের টুকরা দিয়ে মুখ থেতলে চেহারা বিকৃত করে শহিদুল পালিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর শহিদুল বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করে আসছিল। গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াত। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কেরাণীগঞ্জ থানার একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোনালী/জেআর