ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ২:২০ পূর্বাহ্ন

সিটি নির্বাচন || ‘সন্ত্রাসী’ রুবেল ফের প্রার্থী

  • আপডেট: Wednesday, June 7, 2023 - 12:00 am

|| রাজশাহী সিটি নির্বাচন-২০২৩ ||

♦প্রায় হাফডজন মামলার আসামি রুবেল ♦ আছেন গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে ♦ অনেক তথ্য গোপন নির্বাচনি হলফনামায় ♦চরম আতঙ্কে এলাকাবাসী 

স্টাফ রিপোর্টার: জমি দখল, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ও শহরের ‘আতঙ্ক’ হিসেবে খ্যাত জহিরুল ইসলাম রুবেল আবারও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন রাসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তিনি যেন ফিরেছেন নিজের চিরচেনা রুপে! রাতের আঁধারে স্থানীয় ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করাসহ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে হত্যার হুমকি দেয়ায় অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও প্রার্থী মতিউর রহমান মতি এ সংক্রান্ত অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রুবেল ও তার কর্মী সমর্থকরা তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ইঙ্গিতপূর্ণভাবে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। এনিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তিনি।

সেখানে মতি উল্লেখ করেছেন, গত শনিবার (৩ জুন) রাতে লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়ার মিঠুন মোড় নামক এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেল তার আরো কিছু কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওইসময় নিজের প্রচারণার কাজ শেষ করে তিনি (মতিউর রহমান) ওইদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন। তখন প্রার্থী রুবেল ও তার সহযোগীরা তাকে বিভিন্ন রকম ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এনিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রার্থী মতিউর রহমান মতি।

জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল হোসেন জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “হত্যার হুমকির বিষয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী মতিউর রহমান মতি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

এনিয়ে বক্তব্য নিতে কাউন্সিলর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেলের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে মতিউর রহমান মতি সোনালী সংবাদকে বলেন, “নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগে থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কর্তৃক আমি বিভিন্ন হুমকি-ধামকি পাচ্ছি। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে; এসবের পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এলাকার মানুষ অত্যন্ত আতঙ্কিত! তারা ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছে। রাতের আঁধারে আমার কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বাড়িতে গিয়েও বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এখন আমাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এনিয়ে থানায় জিডি করেছি। নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল পরিবেশ কামনা করি।”

এদিকে, গত ৫ জুন শীর্ষ পর্যায়ের একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে জহিরুল ইসলাম রুবেলের বিভিন্ন অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজশাহীর শীর্ষ এই সন্ত্রাসীর ওপর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজর রাখছেন বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হলফনামায় নিজের অনেক অপকর্মের তথ্য লুকিয়ে রুবেল প্রার্থী হয়েছেন জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক ও অস্ত্র জগতের ডনখ্যাত রুবেলের ইশারাতেই চলে রাজশাহী মহানগর ও এর আশপাশের অপরাধ জগৎ। নিজ এলাকা ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে তার দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী ও শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। এ ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমেই জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন রুবেল। হাফডজন মামলার আসামি হয়েও নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

সন্ত্রাসী রুবেলের হলফনামা ঘেঁটে প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, নগরীর চন্ডিপুরের বাসিন্দা এইচএসসি পাস রুবেল ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাসায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকামূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকামূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। হত্যা, মাদক, অস্ত্র, পুলিশের ওপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা চলমান। একটি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু হলফনামার তথ্যের বাইরেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা।

মামলার নথি অনুসন্ধান করে পত্রিকাটি জানায়, রুবেলের বিরুদ্ধে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পবা থানায় ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর ৩০২/৩৪ ধারায় একটি মামলা হয়। যার এফআইআর নং-২০। ২০১৩ সালের ২২ জুলাই রাজপাড়া থানায় ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩৮০, ৪৪৮/৩৪ ধারার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রুবেল। রাজপাড়া থানায় ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৪৩, ৪৪৮, ৩৮৫, ৩৭৯, ৪৩৫, ৪২৭, ৫০৬ ধারার মামলার আসামিও তিনি। ২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩২৩, ৩২৫, ৩০৭, ৩৭৯ ধারার মামলাতেও রুবেল আসামি বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জমি দখলের অভিযোগ তুলে নগরীর হরগ্রাম পূর্বপাড়া (বাগান পাড়া) এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম গত বছরের ১৭ মে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন। এসব মামলার কোনোটিই রুবেলের হলফনামায় উল্লেখ নেই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এক সময়ের রাজশাহী মহানগর বিএনপির দুর্ধর্ষ নেতা শফিকুল ইসলাম ওরফে কানা শফিকের (বছর দেড়েক আগে নগরীর দাশপুকুর এলাকায় জমি দখলের সময় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত) হাত ধরে রুবেলের উত্থান।

এরপর সড়ক ও জনপথের বিভিন্ন টেন্ডারবাজির মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে রুবেলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এরপর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে আরেক সন্ত্রাসী মাহাফুজের সঙ্গে গড়ে তোলেন ‘মায়া’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এ মায়া গ্রুপ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করতেন রুবেল এবং তার বড় ভাই ও ভাগ্নে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক ওই পত্রিকাকে বলেন, “তার (জহিরুল ইসলাম রুবেল) বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, সেগুলো নথি না দেখে বলতে পারব না। কোনো তথ্য গোপন করলে অবশ্যই সেটি নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখবে।”

সোনালী/জেআর