ঢাকা | মে ৪, ২০২৪ - ২:৫০ অপরাহ্ন

দুই কৃষকের আত্মহত্যা: এবার বরেন্দ্র ভবন ঘেরাও

  • আপডেট: Monday, April 11, 2022 - 10:25 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: দুই কৃষকের আত্মহত্যার প্রতিবাদে এবার বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদর দপ্তর ‘বরেন্দ্র্র ভবন’ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষাণ-কৃষাণিরা। তাদের পাশাপাশি এসেছিল শিশু-কিশোর-কিশোরী এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের সদস্যরা। সোমবার দুপুর ১২টায় কয়েক’শো নারী-পুরুষ বরেন্দ্র ভবনে যান।

এর আগে সকালে তারা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটি এর আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে রক্ষাগোলার সংগঠক বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অফ ভলান্টারী অর্গানাইজেশন (সিসিবিভিও)।

মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে যাদের কারণে দুই কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন তাদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সেচ কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএমডিএ কর্তৃপক্ষকে তদন্তের আওতায় এনে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, নলকূপ পরিচালনার ক্ষেত্রে কৃষকবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নলকূপ অপারেটর হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ও প্রান্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ও প্রন্তিক কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের পানি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিতে পানি ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়।

এই স্মারকলিপিতে আত্মহত্যা করা কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডি; রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সরল এক্কা, উপদেষ্টা প্রসেন এক্কা, সদস্য রঞ্জিত পাহাড়িয়া ও সিসিবিভিও প্রতিনিধি মো. আরিফ স্বাক্ষর করেন। এই স্মারকলিপি দেওয়ার পর তারা বরেন্দ্র ভবন অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। তাদের আসার খবরে আগে থেকেই বরেন্দ্র ভবনে অবস্থান নিয়েছিল প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্য।

তীব্র গরমের মধ্যেও প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গায়ের ঘাম ফেলতে ফেলতে কয়েক’শো মানুষ দুপুর ১২টায় বরেন্দ্র ভবনের সামনে এলে প্রধান ফটকে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তখন পুলিশকে আস্বস্ত করা হয় যে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন হবে। পরে প্রায় পাঁচ মিনিট পর পুলিশ কৃষাণ-কৃষাণিদের ভেতরে ঢুকতে দেয়। ভেতরে ঢুকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার কৃষাণ-কৃষাণিরা বরেন্দ্র ভবনের সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে পড়েন।

এরপর আত্মহত্যা করা কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডিসহ একটি প্রতিনিধি দল বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল হোসেনের কক্ষে গিয়ে একটি স্মারকলিপি দেন। তাঁদের সঙ্গে উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ কুমার সরকার এবং সিসিবিভিও প্রতিনিধি মো. আরিফসহ রক্ষাগোলা কমিটির কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সচিবকে বলেন, দুই কৃষকের আত্মহত্যার দায় বিএমডিএকেই নিতে হবে এবং পানিবন্টন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

ঘটনার পর অনেকেই দুই কৃষকের বাড়ি গিয়ে পরিবারকে সান্তনা জানালেও বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান এখনও কেন যাননি সে প্রশ্ন তোলা হয় সচিবের কাছে। তারা বলেন, ‘বিএমডিএ কৃষককে নিয়ে ব্যবসা করছে। অথচ কৃষক মরলে এর চেয়ারম্যান কেন যাননি?’ সচিব এ সময় চুপচাপ থাকেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, স্মারকলিপিতে থাকা অভিযোগগুলো দেখে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

পরে দুপুরে ফিরে যান কৃষাণ-কৃষাণিরা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েক’শো নারী-পুরুষের মধ্যে যার কাছেই দুই কৃষকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁরাই বলেছেন যে পানি না পেয়ে তারা বিষপান করেছেন। তারা এর বিচার চান। উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ কুমার সরকার এবং সিসিবিভিও প্রতিনিধি মো. আরিফ বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ নিরিহ। তাই দুই কৃষকের মৃত্যুকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিএমডিএ দায় এড়ানোর চেষ্টা করলে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

গত ২৩ মার্চ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ ও তার চাচাতো রবি বিষপান করলে তাদের মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন দুই কৃষককে বোরো ধানের জমিতে পানি দিচ্ছিলেন না। তাই তারা নলকূপের সামনেই বিষপান করেন। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার দুটি মামলা করা হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর বিএমডিএ তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। তবে বিএমডিএ, পুলিশ এবং প্রশাসন দুই কৃষকের আত্মহত্যাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।