ঢাকা | নভেম্বর ১৬, ২০২৫ - ১:৪৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই মঞ্চে ডাকসু, চাকসু ও রাকসু ভিপি

  • আপডেট: Saturday, November 15, 2025 - 9:39 pm

রাবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের আয়োজিত ‘নবীন বরণ- ২০২৫’ অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে ডাকসু, চাকসু ও রাকসুর নির্বাচিত ভিপিরা।

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তারা নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা ও পরামর্শমূলক বিভিন্ন বক্তব্য রাখেন। নবীনবরণ অনুষ্ঠান জুড়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নির্বাচিত ভিপিরা অতীত ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস, রাবির আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতি এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

নেতারা নবীন শিক্ষার্থীদের সামনে সংগঠনগুলোর আদর্শ, নীতি, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সৎ, ন্যায়ভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গণ গড়ার আহ্বান জানান। বক্তৃতায় ১৯৬৯ ও ১৯৮২ সালের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর স্মরণ, বিভিন্ন দমন-পীড়নের বিবরণ, ছাত্রসংগঠনগুলোর বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার তাগিদ উঠে আসে।

ছাত্রশিবিরের পূর্ব ইতিহাসকে স্মরণ করে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেই প্রোগ্রামকে ভন্ডুল করতে যারা সম্মিলিত আক্রমণ চালিয়েছিল এবং তাদের অপতৎপরতার কারণে শহীদ হয় আমাদের শহীদ ছাব্বির ভাই। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে যখন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সারাদেশ অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছিল তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের অবদানকে গভীরভাবে স্মরণ করছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা গভীর। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও আমি এখানকারই ছেলে। কলেজ পর্যায় থেকেই আমি এ ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করার কারণে খুব পরিচিত হয়ে গেছিল সবকিছু। এ ক্যাম্পাসে তখন পড়ার সুযোগ হয়নি। রাজশাহী কলেজে কয়েকজন ছাত্রশিবিরকে চিনলে তার মধ্যে আমাকেও চিনতো ছাত্রলীগ।

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।

তিনি আরও বলেন, সেই দিন আজ পাল্টে গেছে। এই নবীনবরণ করতে গিয়ে আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, আর আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারছি এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৮২ সালের পর আজই প্রথম আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় নবীনবরণের আয়োজন করেছি। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও সেখানে আমরা আমাদের বোনদের রাখতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা তা করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।

এসময় ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ‘খুনি হাসিনা ছাত্রশিবিরের উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল। সর্বশেষ ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু শিবির থেকে গেছে মানুষের হৃদয়ে, আর হাসিনা পালিয়েছে দিল্লিতে। ছাত্রশিবির দেশের মানুষের ন্যায়ের পক্ষে, আজাদীর জন্য সবসময় লড়ে গেছে এবং যাবে। একই সঙ্গে শিবির যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে আপনারা প্রতিবাদ করবেন। সকল ছাত্র সংগঠনকে অনুরোধ করবো ইসলামী ছাত্রশিবির যে নতুন ধারার রাজনীতি করছে তা আপনারা অনুসরণ করেন।’

আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের এই নবীন বরণ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করবো খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ তার ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। তার সাথে যারা ছিল তাদেরও বিচার করতে হবে। দেশের বিচার বিভাগ, সচিবালয়, আইন বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। যারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে, তাদেরকে আপনারা প্রতিহত করবেন। এই দেশে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তারা- যারা বাংলাদেশপন্থি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি।কারণ এটি ব্রিটিশ ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে তৈরি।’

রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগ-কোরবানির গল্প শুনে বড় হয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপর ইতিহাসের বর্বরোচিত মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছিল। বিগত ফ্যাসিবাদী সময়ে এই সুন্দর ক্যাম্পাস ছিল না। গণরুম, গেস্ট রুমের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চলতো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হতো। কেউ ইসলাম চর্চা করতে পারতো না। যারা করতো তাদের ট্যাগিং করা হতো এবং নির্যাতন করা হতো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ যারা করতো তাদের ট্যাগিং করা হতো এবং নির্যাতন করা হতো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই- তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর কোনো নব্য ফ্যাসিস্ট জন্মাতে পারবে না। তোমাদেরকে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেনসহ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন।