ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৫:৪০ অপরাহ্ন

ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ১৪৪ বিষয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্য!

  • আপডেট: Thursday, April 7, 2022 - 8:09 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: এক বছর দুই বছর নয় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন বিষয়ে সার্টিফিকেট দিচ্ছিল ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি। টাকা দিলেই মিলত ১৪৪ বিষয়ের ওপর সার্টিফিকেট। বিষয়গুলো যেনতেন নয়, রয়েছে এমবিবিএস, বিডিএস, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইনসহ এমফিল, পিএইচডি পর্যন্ত। ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম প্রিমিয়ার ইনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।

ভুয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল হোতা নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনিসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের একটি দল। বুধবার রাজধানীর মালিবাগ, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি। ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।

নূরুল হক ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া অন্য পাঁচ ব্যক্তি হলেন মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সাঈদুর রহমান ওরফে নজরুল, মো. মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ, আমান উল্লাহ এবং দেবাশীষ কুন্ডু।

এদের মধ্যে চারজন ভুয়া চিকিৎসক, যারা ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ার ইনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে চিকিৎসাবিদ্যার কথিত সার্টিফিকেট নিয়ে এতদিন ধরে রোগী দেখে আসছিল।

গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে অসংখ্য ভুয়া সনদপত্র, টেস্টিমোনিয়াল, ট্রান্সক্রিপ্ট, রেজিস্টেশন কার্ড, প্রবেশপত্র, নকল সিল, চারটি ব্যাংকের ভুয়া চেকবই, চটকদার বিজ্ঞাপনের কাটিং, লিফলেট, চিকিৎসাপত্র, ভিজিটিং কার্ড, নবদিগন্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কপি, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, একটি কীবোর্ড ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এই চক্রটি ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে আসছে। তাদের বিজ্ঞাপনে বলা কথিত কম্পিউটারাইজড ক্যাম্পাস, এটির কোনো অস্বিত্ব নেই।

এছাড়া চক্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া আদেশ, হাইকোর্টের জাল রিটের কপি দেখাতো। এমনকি এই প্রতারক চক্রের রোগী দেখার চেম্বার অত্যাধিুনিক উপায়ে সজ্জিত এবং নামফলক সম্বলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিগ্রি উল্লেখ করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, ‘এই চক্রটি এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডি, ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাডভোকেটশীপসহ ১৪৪ ধরনের ভুয়া সার্টিফিকেট দিত। এসবের মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাস্তবে প্রিমিয়ার ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজি নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।’

হাফিজ আক্তার বলেন, ‘নুরুল হক সরকার নিজেকে পিচ ব্যালেন্ড ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স (পিইউএসটি) এবং পিস ল্যান্ড ইউনির্ভাসিটি নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলে পরিচয় দিতেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়া সাইদুর রহমান নজরুল, দেবাশীষ কুন্ডু, আমান উল্লাহ এবং মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজসহ অসংখ্য বক্তিদের ভুয়া ডাক্তারি সনদপত্র দিয়েছেন।’

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘নূরুল হক সরকারের এই চক্রে তার পরিবারের সদস্যরাসহ আরও বেশ কিছু সহযোগি রয়েছে। সংঘবদ্ধ চক্রটি কোন রকম ক্লাস ও বৈধ অনুমোদন ছাড়াই ১৪৪ ধরনের ভূয়া জাল সনদ তৈরি করে। বাসায় এবং ভাড়া করা অফিসে বসে বিভিন্ন সরকারী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের আদলে কম্পিউটার প্রিন্ট করে সেসব সার্টিফিকেট সরবরাহ করত।’

হাফিজ আক্তার জানান, নুরুল হক সরকারের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। পত্রপত্রিকায় চটকদারি বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের আহবান করত তারা। এসব শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট পাঠানো পার্সেলের মাধ্যমে।

ডিএমপি ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘তারা একটি এমবিবিএস সার্টিফিকেটের জন্য পাঁচ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিত। আবার কারো কারো কাছ থেকে এক বা দুই লাখ টাকাও নিয়েছেন।’