বড় মসজিদের ১৫ কোটি টাকা গায়েব!
অনলাইন ডেস্ক: ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসাবে খ্যাত ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা (এক মিলিয়ন পাউন্ড) একটি অখ্যাত কোম্পানিতে বিনিয়োগের (করজায়ে হাসানা) খবরে কমিউনিটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিনিয়োগের পরপরই কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যায়। এই টাকা আর ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তবে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মানুষের নিকট থেকে দান ও করজায়ে হাসানার আবেদন জানিয়ে সংগ্রহ করা তহবিল কেন বিনিয়োগ করা হবে, এ নিয়ে কমিউনিটতে উঠেছে নানা প্রশ্ন। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় একটি বাংলা সপ্তাহিক পত্রিকা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে জনশ্রুতি রয়েছে, কৌশলে একটি চক্র মসজিদে মানুষের দানের এ বিশাল অঙ্কেও টাকা মেরে দিয়েছে। এই ঘটনাটি দুবছর আগের পুরাতন হলেও প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। এক মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ২০২৩ সাল থেকেই নানা কানাঘুষা ছিল। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে গত রমজান মাসে। প্রতি রমজানেই বিশেষ কালেকশনের উদ্যোগ নেয় ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্ট। এর অংশ হিসেবে প্রচারণার জন্য আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলনের।
স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হন। এতে একজন সাংবাদিক দানের টাকা অখ্যাত কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এরপরই ঘটনাটি ব্যাপকভাবে চাউর হয় কমিউনিটিতে। যদিও সংবাদ সম্মেলনে সন্তোষজনক কোনো জবাব না দিয়ে বিষয়টি আইনের আওতায় বিচারাধীন বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয় বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্ট এক মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করে ম্যাটজ মেডিকেল লিমিটেড নামক একটি অখ্যাত কোম্পানিতে। শুধু তাই, ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্টের বিল্ডিংয়ে একটি বিশেষ দলের লোক না হলে ভাড়াও মিলে না। দান সংগ্রহ করা হয় সর্বজনীনভাবে। অথচ, মসজিদ সংলগ্ন দোকান ও মুসলিম সেন্টারের ভবনে ভাড়া দেয়া হয় একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের। এ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিষয়টি স্বীকার করে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবদুল হাই মোর্শেদ বলেন, এখানে বিনিযোগ করা হয়েছে, ওই অর্থ খোয়া যাওয়া গুজব নয়, এটা সত্য এবং কিছু সমস্যা হয়েছে এটিও সত্য। কিন্তু এই জিনিসটা এমন জটিল, আপনারা কোম্পানি হাউসে গিয়ে চেক করতে পারবেন।
এদিকে কোম্পানি হাউসে জমা দেওয়া ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রতিবেদনে ‘খোয়া’ যাওয়া মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘The full investment amount of ELMT, is deemed irrecoverable.’ অর্থাৎ ইস্ট লন্ডন মস্ক ট্রাস্টের সম্পূর্ণ বিনিয়োগ এর পরিমাণ উদ্ধারযোগ্য নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রমজান মাসেই মূলত বড় আয় হয় ইস্ট লন্ডন মসজিদের। দানের জন্য রমজানে সাধারণ মুসল্লিদের নিকট নানা রকমের আবেদন থাকে। বিগত রমজানেও বিভিন্ন আপিলের মাধ্যমে ইস্ট লন্ডন মস্ক ৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৯১ পাউন্ড নগদ সংগ্রহ করেছে। এর বাইরে করজে হাসানা ও দানের আরও ৩ লাখ ৬২ হাজার ১৮২ পাউন্ডের অঙ্গীকার করেছেন বিভিন্নজন। এই হিসাবে এবারের শুধু রমজান মাসেই কমিউনিটির কাছ থেকে ৮ লাখ পাউন্ডেরও বেশি তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
নামাজের সময় মসজিদে অভ্যন্তরীণ আপিল ছাড়াও টেলিভিশন ও স্থানীয় বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোতে দানের জন্য আবেদন জানিয়ে ব্যাপক প্রচারা চালানো হয়। মসজিদের উন্নয়ন তহবিলের বাইরেও যাকাত এবং ফিতরার আরও ৯৬ হাজার ৫২৮ পাউন্ড তহবিল পেয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেনে বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটির উদ্যোগেই মূলত ইস্ট লন্ডন মসজিদের যাত্রা হয়েছিল। ১৯১০ সালে একদল ধার্মিক বাঙালি মুসলমান এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন দেশের মুসলিম ইমিগ্রান্ডদের সহযোগিতায় মসজিদটি বর্তমানে বিশাল অবস্থানে পৌঁছায়।
মসজিদে শুধু নামাজই নয়। নানা সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করে থাকে। এই মসজিদ পরিচালনার জন্য গঠন করা হয়েছে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ট্রাস্ট। চ্যারিটি কমিশনে নিবন্ধিত এই কোম্পানির সদস্য সংখ্যা ৮২ জন। এ সকল সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ১২ জন ট্রাস্টি মসজিদ পরিচালনার মূল দায়িত্বপালন করেন।
সোনালী/সা