ঢাকা | নভেম্বর ২৪, ২০২৪ - ১:৩৬ পূর্বাহ্ন

কলমাকান্দায় ফের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

  • আপডেট: Wednesday, July 3, 2024 - 11:29 am

অনলাইন ডেস্ক: নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

রোববার রাত থেকে এ সব গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু সড়ক ও ঘরবাড়ি। পানি ঢুকছে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এছাড়া ঢলের পানিতে কলমাকান্দার প্রধান উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে গণেশ্বরী, মহাদেও, বাখলা, আত্রাখালী, ধলেশ্বরী, মঙ্গেলশ্বরী, বৈঠাখালী নদীর পানি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও, উদয়পুর-বড়খাপন, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়াসহ আরও বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে এ সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান উব্দাখালী নদীসহ সবকটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

জানা গেছে, এই পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্লাবিত হয়েছে বিশরপাশা, নাগডড়া, হরিণধরা, বাসাউড়া, কেশবপুর, চিনাহালা, চান্দুয়াইল, ডোয়ারিয়াকোনা, পাচকাঠা, সন্ধ্যাহলা, গণিয়ারগাও, কয়ড়া, ধনুন্ধ, মঙ্গলশীদ, মাকৈলুন্দ, গোয়াতলা, মূল পোগলা, ভাটিভাড়া, বড়ইউন্দ, কেশবপুর, কান্দাপাড়া, চৌহাট্টা, রাজনগর, জয়নগর, গৌরীপুর, লক্ষ্মীপুর, বিষ্ণুপুর, বাঘেরপাড়া, বাউসাম, বেনুয়া, চানকোনা, জামসেন, বাহাম, সাকুয়া ইন্দ্রপুর, রামভদ্রপুর, কালাইকান্দি, মুন্সিপুর, মনিপুরপাড়া, বিশাউতিসহ শতাধিক গ্রাম।

বন্যার পানি ঢুকেছে, বাহাদুরকান্দা, বাসাউড়া, মাইজপাড়া, গোবিন্দপুর, চামারচানী, বেতুয়া-লাইয়া, মধ্যচকপাড়া, চকপাড়া, বাউসারী, কেশবপুর, নানিয়া, গণকপুঞ্জি, বাউসাম, খারনৈ, রুদ্রনগর, উত্তররানীগাও, গোয়াতলা, শুনই, পোগলা, বাদে গোপলা, পনারপারুয়া, ধীতপুর, গঙ্গানগর, ভাটিপাড়া, রানীগাও, কান্দাপাড়া, হরিণধরা, রাজাপুর, হরিপুর, রামনাথপুর, কাকুরিয়া মাছিমসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, কলমাকান্দায় ৪২টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। উপজেলায় ১৭২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয়কে বন্যা আগাম দুর্যোগ মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের বাউসাম, লক্ষ্মীপুর, শ্রীপুর, খাগগড়া, বিশ্বনাথপুর, সেনপাড়া, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান বলেন, বড়খাপন ইউনিয়নটি নিচু এলাকা। ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর একটু পানি বাড়লে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে। বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, প্রচুর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। আমরা সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজের জন্য নৌকা, ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

সোনালী/ সা