ঢাকা | নভেম্বর ২৪, ২০২৪ - ১১:৪৩ অপরাহ্ন

মাদকের মামলায় নামের মিলে কলেজ ছাত্রের হাজতবাস!

  • আপডেট: Wednesday, May 15, 2024 - 11:30 am

স্টাফ রিপোর্টার: মাদক মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় রাজশাহীতে এক কলেজছাত্রকে হাজতবাস করতে হয়েছে। মূল আসামি ইসমাইল হোসেন (২১) ভারত পালিয়ে গেলেও তার স্থলে আরেক ইসমাইল গ্রেপ্তার হন।এরপর পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়।

গ্রেপ্তারের পর সোমবার (১৩ মে) দুপুরে ওই কলেজছাত্রকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর আসামি শনাক্তে ভুল হওয়ার বিষয়টি আঁচ করেতে পেরে পুলিশ ওইদিন বিকেলেই আদালতে একটি প্রতিবেদন দেয়। পরে মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে আদালত নিরপরাধ ওই কলেজছাত্রকে মুক্তি দেন।

ওই মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম। রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইনামুল ইসলাম।

এর পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর এক মাস পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল জামিনে মুক্তি পান। আর এর কিছুদিন পরই তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ নিয়ে ভারতের চেন্নাই পালিয়ে যান। আর তার বাবা গত ছয় বছর ধরে সেখানেই আছেন।

ওই ভুক্তভোগী গোদাগাড়ী উপজেলার সদর পৌরসভার ফাজিলপুর মহল্লার আব্দুল করিমের ছেলে। আর তার মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। ইসমাইল গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

আর মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক ওই আসামির নামও ইসমাইল হোসেন। তার বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার লালবাগ হেলিপ্যাড মহল্লায়। তারও বাবার নাম আবদুল করিম। তবে তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। মূল আসামি ইসমাইল পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। মাদক মামলায় জামিন নেওয়ার পর তিনি ভারতের চেন্নাই পালিয়ে গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। এখন এই আসামি এবং ওই কলেজছাত্রের দুইজনের নিজের নাম এবং তাদের বাবার নামও এক। তাই ভুলবশত তাকেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। যদিও তাদের দুইজনেরই স্থায়ী বসবাসের ঠিকানা এবং মায়ের নাম আলাদা ছিল।

কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল জানান, রোববার (১২ মে) রাতে গোদাগাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান তাদের বাড়ি যান। এ সময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে তার ভাই ইসমাইলকে ধরে নিয়ে যান। ওই সময় তারা পুলিশকে জানান, তার ভাইয়ের নামে কোন মাদক মামলা নেই। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও নেই। পুলিশ কোনো কথা না শুনেই ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে সোমবার (১৩ মে) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়।

এরপর এই মামলায় কলেজছাত্র ইসমাইলকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিনকে ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা অবহিত করলেও তিনি তাকে ছাড়েননি। তিনি তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তখন পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানাকে এই বিষয়ে অবগত করেন।

পরে সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা বিষয়টি আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য গোদাগাড়ী থানাকে নির্দেশ দেন। নির্দেশের পেয়ে পুলিশ খোঁজখবর শুরু করে। তারা একপর্যায়ে নিশ্চিত হয় যে, মাদক মামলার মূল পলাতক আসামি ইসমাইলের বদলে তারা অন্য এক ইসমাইলকে ধরে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনি কলেজছাত্র।

ওসি আবদুল মতিন বলেন, তারা সোমবার এই ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। দুইজনের নিজের এবং বাবার নাম একই থাকার কারণে এমন ভুল হয়েছে। পরে ভুল বুঝতে পেরে সোমবার বিকেলেই তারা আদালতে একটা প্রতিবেদন দেন। আজ আদালত তাই ইসমাইলকে মুক্তির আদেশ দেন। আর মূল আসামি ভারতে পালিয়ে গেছে। তবে দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

 

সোনালী/ সা