স্বর্ণের দামে বিশ্ব রেকর্ড, আরও বাড়ার আভাস
অনলাইন ডেস্ক: বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৩৩০ ডলার ছাড়িয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বেড়ে ইতিহাস গড়েছে। সামনে এ দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাচীন কাল থেকেই প্রাচুর্যের অপর নাম স্বর্ণ। একে বলা হয়, অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়তো সে কারণেই এর মূল্য কখনো শূন্যে নামেনি। বরং দিন যতো যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য।
শনিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববাজারে লেনদেনের একপর্যায়ে এক আউন্স স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম ওঠে ২ হাজার ৩৩০ দশমিক ২০ ডলারে। রোববার (৭ এপ্রিল) প্রতিবেদন লেখার সময় স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম অবস্থান করছে ২ হাজার ৩২৯ দশমিক ২০ ডলারে। প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম একদিনে ৩৮ দশমিক ৫০ ডলার বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে বিশ্ববাজারে কেনাবেচা চলছে।
এদিকে শনিবার ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে একভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দেয়ায় বাড়ছে স্বর্ণের দাম। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক কারণেও নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে মানুষ ঝুঁকছেন স্বর্ণের দিকে। এ বছর প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে তা ছাড়িয়েছে। সামনে এ দাম আরও বাড়বে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির সমস্যা চলছে। যা স্বর্ণের দাম বাড়ার পেছনে একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। মূলত মূল্যস্ফীতি বাড়লে অর্থের মান কমে যায়। তখন স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়ে।
বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মাসুদুর রহমান আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ যখন সুদের হার বাড়ায় তখন স্বর্ণের দাম কমে যায়। কারণ ডলারের প্রতি মানুষ তখন ঝুঁকে যায়। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। সুদহার কমলে বিশ্ববাজারে আরও বেড়ে যাবে স্বর্ণের দাম। তখন দেশের বাজারেও দাম সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে।
এ ছাড়া ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন ডলারের বদলে স্বর্ণ মজুতকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে বাড়ছে স্বর্ণের চাহিদা। আর চাহিদা বাড়ায় প্রভাব পড়ছে দামেও।
অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, বিশ্ববাজারে এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ। সামনে এ দাম আরও বাড়তে পারে। আর এর প্রভাবে দেশের বাজারেও দাম বাড়বে।
মূলত ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর ইঙ্গিত ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সুদহার কমে গেলে মানুষ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণকেই বেছে নেয়। যার ফলে বাড়ে দাম। আর বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও দাম সমন্বয় করা জরুরি হয়ে পড়ে জানিয়ে মাহফুজ কবির বলেন, দাম সমন্বয় না করলে কম দামি স্বর্ণগুলো পার্শ্ববর্তী যেসব দেশে স্বর্ণের দাম চড়া, সেখানে পাচার হয়ে যেতে পারে।
সোনালী/ সা