ছাত্রীদের ‘অপ্রীতিকর বার্তা’ পাঠানোর অভিযোগ রাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: শ্রেণীকক্ষে ছাত্রীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কয়েকজনকে মেসেঞ্জারে ‘অপ্রীতিকর বার্তা’ পাঠিয়ে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সোমবার বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ অভিযোগ করা হয়। এ সময় ওই শিক্ষককে সকল বর্ষের পাঠদান থেকে অব্যহতি ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া দুইদিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে তীব্র আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়।
যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তার নাম হাফিজুর রহমান।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘হিজাব আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা’, ‘ব্যক্তি স্বাধীনতায় চলবে না কোনো না হস্তক্ষেপ’, ‘বাবার মতো শিক্ষকের এ কেমন আচরণ’, ‘ক্লাসে পর্দার অধিকার হরণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’, ‘শিক্ষক যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’, ‘নিকাব নিয়ে হয়রানি মানছি না মানবো না’, ‘নিকাব নিয়ে আর নয় কোনো কূটুক্তি’, ‘হিজাব, নিকাব, পর্দা আমার অহংকার-গর্ব’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড প্রদর্শণ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাসে গরম লাগার কারণে তিনি ছোট একটি কাগজ দিয়ে নিজেকে বাতাস করছিলেন। এ সময় ওই শিক্ষক তাকে দাঁড় করিয়ে বলেন,‘ এটা কি করছো? এটা তো খুবই দৃষ্টিকটু। এ রকম প্যাকেটের মত পোশাক পরে আসলে তো গরম লাগবেই! তোমার গরম তোমার কাছেই রাখো।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আরেকদিন তার এক বান্ধবী ক্লাসে জোরে উপস্থিতি দিলেও তিনি (শিক্ষক) না শোনার অজুহাত দিয়ে জোরপূর্বক নিকাব খুলিয়েছেন। এছাড়া আরেক বান্ধবীর নিকাব নিয়ে কটুক্তি করেছেন। ওই শিক্ষক শুধু নিকাব নিয়ে নয়, সাথে পুরো ইসলামের সংস্কৃতি নিয়ে কটুক্তি করেছেন। তিনি ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
একই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, ‘হাফিজুর রহমান ইসলামিক স্টাডিজের মতো বিভাগের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বোনকে হিজাব খোলার মতো নিকৃষ্টমূলক কথা বলেন। তিনি ক্লাসে এসে ছাত্রীদেরকে বলেন, তোমরা কেন হিজাব পরে আসো? তোমরা কি স্মার্ট হতে শিখনি।’ ছাত্রীদের হেনস্তা করায় ওই শিক্ষককে বিভাগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।
বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বান্ধবী, বড়বোন ও ছোটবোনদের পর্দার অধিকার নিয়ে কটুক্তি করার প্রতিবাদে আজকে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, আমাদের বোনদের হিজাব পরার ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। এই হিজাব নিয়ে কটুক্তি করে ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা চলবে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহা. আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে।’