ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৫:২৬ অপরাহ্ন

পত্নীতলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঘর নির্মাণের টাকা ইউএনও’র পকেটে!

  • আপডেট: Monday, March 4, 2024 - 12:00 am

পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের (আদিবাসী) জীবনমান উন্নয়নের জন্য সর্বশেষ বরাদ্দ আসে ১৭ টি ঘর নির্মাণের। এর মধ্যে ১০ টি ঘরের আংশিক কাজ চলমান এবং বাঁকি ৭টি কাজ এখনো শুরু হয়নি।

কিন্তু কাগজ-কলমে ১৭ টি ঘরের কাজ শেষ দেখিয়ে গত ডিসেম্বর (২০২৩) বদলির আগেই তিনি এসব বরাদ্দকৃত টাকা তুলে নিয়ে যান। ফলে ঘরগুলোর নির্মাণাধীন কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। এমন অভিযোগ উঠেছে পত্নীতলা উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে।

রুমানা আফরোজ বর্তমান বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষে কয়েক বছর আগে থেকে দেশের ৬৪টি জেলায় যাদের জমি আছে কিন্তু বাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এমন সব দরিদ্রদের জন্য আধাঁপাকা বাড়ি নির্মাণ করার কার্যক্রম শুরু করে সরকার।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পত্নীতলা উপজেলাতে ২৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গৃহহীন পরিবারের জন্য বসতঘর নির্মাণের বরাদ্দ আসে। ইতিপূর্বে আরও ১৫টি ঘর বরাদ্দ পান আদিবাসীরা। প্রতিটি বসতঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। যেখানে থাকবে টিনের ছাউনির দুটি ঘর।

ওই সময়ে ঘরটি নির্মাণের দায়িত্ব পান তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ। এরপর তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গৃহহীন আদিবাসীদের যাচাই- বাছাই করে তাঁদের মাঝে ঘর বন্টন করে। প্রথমে ১৫ টি ঘর নির্মাণ করে আদিবাসীদের হস্তান্তর করা হয়।

পরে আরও ৮টি ঘর নির্মাণ করেন। এরপর বরাদ্দ আসে ১৭ টি ঘর নির্মাণের । কিন্তু সেই সব ঘরের কাজ না করেই কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করেন। পরে ঘরের নির্মাণের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বদলি হয়ে চলে যান বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলাতে।

এ ঘটনার পর ওই ঘর গুলো বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন তদারকি শুরু করলে পরে ১০টি ঘরের কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর আদমদিঘী থেকে একজন প্রতিনিধি দিয়ে আস্তে আস্তে কাজটি চলমান রাখেন।

অবশিষ্ট ৭ টি ঘরের কাজ এখনো তিনি শুরু করেননি। যার ফলে ঘরগুলো নির্মাণ হতে অনেক বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ঘর নির্মাণ দেরি হওয়ায় আদিবাসীরা তাদের বরাদ্দকৃত ঘর না পেয়ে কেউ কেউ খোলা আকাশে নিচে ও প্রতিবেশীদের বাড়ির উঠানে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন।

আদিবাসী নেতা যতিন জানান, ঘরগুলো না পেয়ে গৃহহীন পরিবাররা খুব কষ্টে অন্যদের বাড়িতে কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউবা ইট দিয়ে চারপাশে ঘিরে দিনযাপন করছে। মিস্ত্রিরা ঠিকমতো কাজ করছে না। ঘরের কাজগুলো অসম্পূর্ণ রয়েছে। প্রশাসনের নিকট কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার দাবী জানাচ্ছি।

পত্নীতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু শোয়েব খান বলেন, জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে চেকটি আসে। সেক্ষেত্রে চেকের মালিক তিনি নিজেই। ঘর নির্মাণকাজ সম্পন্ন না করে টাকা উত্তোলন করা যায় না। তিনি হয়তো ঘরের কাজ সম্পন্ন দেখিয়েছেন। এজন্য বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করতে পেরেছে। ৭টি ঘরের কাজ এখনো শুরু হয়নি বলে জানান তিনি।

পত্নীতলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ বলেন, কাজ শেষ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগটি সত্য নই। ঘরের সব কাজ শেষ হয়েছে।

পত্নীতলা উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) টুকটুক তালুকদার বলেন, ১০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ৭টি ঘরের কাজ এখনো শুরু হয়নি। কাজ সম্পূর্ণ না করে টাকা উত্তোলন করা যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদেরতো কিছু বাধ্যবাধকতা আছে তাই সব কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয় ডিসি বা এডিসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, ওই সময়ে রুমানা আফরোজ দায়িত্বে ছিলো তাই টাকা উঠিয়ে রাখতে পারে। তাছাড়া টাকা নিয়ে যাবে কোথায় তাকে কাজ করতে হবে।

সোনালী/জেআর