ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

শুল্ক আরোপের খবরে ফের সক্রিয় পিঁয়াজ সিন্ডিকেট

  • আপডেট: Tuesday, August 22, 2023 - 9:00 am

অনলাইন ডেস্ক: ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের খবরে রাজধানীর বাজারে পিঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। এতদিন আমদানি করা পিঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও দুই দিনের ব্যবধানে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি মুনাফার কারণে আবারও পিঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে মুনাফালোভী সিন্ডিকেট। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে; যা গত রবিবারেও ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া দাম বেড়েছে দেশি পিঁয়াজেরও।

বাজারে প্রতি কেজি ভালোমানের দেশি পিঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক দিন আগেও ছিল ৮০ টাকার মধ্যে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারেও বেড়েছে পিঁয়াজের দাম। শনিবার প্রতি কেজি আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। অথচ রবিবার সকালে বিক্রি হয়েছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকায়। আর সন্ধ্যা নাগাদ দাম আরও বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। গতকাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্কসহ এলসি করা পিঁয়াজ এখনো রাজধানীতে আসেনি। কিন্তু এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পিঁয়াজের দাম বাড়ছে। আমদানিকারকদের মতে, ভারতের ভেলোরে সবচেয়ে বেশি পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। অন্যতম পিঁয়াজ উৎপাদনকারী ভারত থেকে বাংলাদেশ, সংযুক্ত আবর আমিরাত. মালেশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ কিছু দেশ আমদানি করে। ভেলোরে এবার ব্যাপক বন্যা হওয়ায় পিঁয়াজ উৎপাদন ও মজুদে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ভারতেইও পিঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। নিজ দেশের সংকট এড়াতে ভারত পরোক্ষভাবে পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ভারত ছাড়াও মিয়ানমার, চীন, মিশর এবং তুরস্ক থেকে পিঁয়াজ আমদানি করে থাকে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, ভারত রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোয় দেশের বাজারে নিত্যপণ্য পিঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় চীন, জাপান, ইরান, মিশর ও তুরস্কসহ যে কোনো দেশ থেকে পিঁয়াজ আনতে চাইলে যে কাউকে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ইস্যুতে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ হয়েছে।

পিঁয়াজ নিয়ে হঠাৎ করে ভারতের এমন সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা বলেছি, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কেন অব্যাহতি দেন না? এতে আপনাদের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এ অনুরোধ করেছি। তারা বলেছে, আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। দ্রুত এ বিষয়টি প্রস্তাব আকারে মন্ত্রীদের গ্রুপে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তারা বলেছেন, বাংলাদেশকে বিশেষ বিবেচনায় দেখবে।

পিঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ কী ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পিঁয়াজ আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মসলা। কিন্তু পিঁয়াজের ব্যাপক ব্যবহার হয় যা অনেকটা সবজির মতো। আমাদের পিঁয়াজের মৌসুম মার্চের শেষে ও এপ্রিলের প্রথম দিকে। তখন দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, এটা হলো আমাদের সমস্যা। পিঁয়াজ যেহেতু পচনশীল, তাই বেশি দিন ঘরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টন পিঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথম দিকে পিঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিইনি। এতে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। পরে ১৩ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানির জন্য আইপিও দিয়েছি। কিন্তু এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন।

সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মনিটরিং দুর্বল নয়। আসলে এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়? কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আসলে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম এমনিতেই কমবে। এটাই হলো মূল কথা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, সিন্ডিকেটে বন্দি দেশের পিঁয়াজের বাজার। চাহিদার তুলনায় এক থেকে ২ লাখ টন বেশি পিঁয়াজ উৎপাদন কম হলেই কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে কথিত সিন্ডিকেট অস্থির করে তুলে পিঁয়াজের বাজার। পিঁয়াজের বাজার কারসাজিতে জড়িত রয়েছেন ৩৯ আমদানিকারক ও ৫০ কমিশন এজেন্ট।

সর্বশেষ শনিবার ভারত সরকার পিঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্ত নিলে এক রাতের ব্যবধানে দেশের অন্যতম পাইকার বাজার খাতুনগঞ্জে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৮ টাকা। অথচ সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে পিঁয়াজের যে মজুদ রয়েছে তাতে আগামী দুই থেকে তিন মাসে কোনো সংকট তৈরি হবে না। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে বাজার মনিটরিং শুরু করবে জেলা প্রশাসন। কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, ‘ভারত হঠাৎ করে পিঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কারোপ করায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা শিগগিরই অন্য দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি বাড়াবে। তখন পিঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হবে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের পিঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম, টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ৩৯ জন আমদানিকারক এবং ৫০ কমিশন এজেন্ট। আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের সবারই চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের সিন্ডিকেটগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। যারা অজুহাত পেলেই কারসাজি করে বাজার অস্থির করে তোলে। কথিত সিন্ডিকেটগুলো এবার ভারতে পিঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের তথ্য পেয়েই কেজিপ্রতি দাম বাড়িয়েছে ১৮ টাকা। অথচ বর্ধিত মূল্যের পিঁয়াজ দেশে আসতে আরও কমপক্ষে ২৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগতে পারে।

বর্তমানে দেশে পিঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। কিন্তু সর্বশেষ অর্থবছরের ৩৪ লাখ টনেরও বেশি পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ অভাব কিংবা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে যায় এক চতুর্থাশ পিঁয়াজ। তাই চাহিদা পূরণে ভারত, মিয়ানমার, চীন, মিশর এবং তুরস্ক থেকে প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ভারত ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করলেও অন্যান্য রপ্তানিকারক দেশে রপ্তানিনীতিতে আগের অবস্থানেই রয়েছে।

পিঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ ভাগ শুল্কারোপের পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর ভারত থেকে নতুন শুল্কের পিঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। পিঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কারোপের খবরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েই চলেছে পিঁয়াজের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পিঁয়াজ কিনতে আসা পাইকারসহ নিম্নআয়ের মানুষজন।

গতকাল দুপুরে ভারত থেকে নতুন শুল্কের পিঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ২০ ট্রাক পিঁয়াজ আমদানি হয়। পিঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কারোপের ফলে রবিবার সকাল থেকে শুরু করে সোমবার দুপুর পর্যন্ত বন্দর দিয়ে নতুন শুল্কের পিঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল।

তবে রবিবার বন্দর দিয়ে আগের টেন্ডার হওয়া দামে ক্রয় করা ৭ ট্রাকে ২১১ টন পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে। শুল্ক বাড়ার খবরে হিলি বাজারে খুচরায় নিম্নমানের পিঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা এক দিন আগে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

সোনালী/জেআর