ঢাকা | নভেম্বর ২৭, ২০২৪ - ৭:০২ অপরাহ্ন

পদ্মার বুকে বাংলা নাট্যের সাংস্কৃতিক নৌযাত্রা

  • আপডেট: Saturday, September 3, 2022 - 11:48 pm

স্টাফ রিপোর্টার: প্রমত্ত পদ্মার বিশাল ঢেউ। সেই মাড়িয়ে ছুটে চলেছে ১৫টি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় লাগানো হয়েছে বিভিন্ন রঙের পতাকা। নৌকাগুলোর আলাদা নাম করা হয়েছে। নৌকায় ছিল বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি। একটি নৌকা ছিল সাংস্কৃতিক মঞ্চ।

বাংলা নাট্যের উদ্যোগে নৌযাত্রায় ঐতিহ্যের গম্ভীরা, আলকাপ, মাদারগান আর মনসামঙ্গল চলে নৌকার মঞ্চে। সময় ভেদে বিনোদনের ধরন বদলেছে। কিন্তু নদী সব সময় ছিল বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। নদী দখল আর দূষণে সেই সভ্যতা যেনো হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে সভ্যতার জাগরণে এমন আয়োজন।

নৌকায় বহন করা হয়েছে লালন শাহের ছবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রাজা রামমোহন রায়, রজনীকান্ত সেন, লোকনাট্য গবেষক কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটক। পুরো এক ঘণ্টার নৌযাত্রা মাতিয়ে রেখেছিল আলকাপ রঙ্গরস গ্রাম থিয়েটার দল ও মাথল গম্ভীরা দল। আলাকাপ দলের শিল্পীরা সবার নজর কাড়েন। রাজশাহী থেকে চারঘাট পর্যন্ত পদ্মার ধারের নারী, শিশু, শ্রমিক দাঁড়িয়ে বাংলা নাট্যের এই নৌযাত্রা উপভোগ করেন।

নদী কেন্দ্রীক বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে নিতে প্রতীকী এই বর্ণিল আয়োজন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি বটতলা থেকে যাত্রা শুরু হয়। শেষ হয় বড়াল নদীর মোহনায় গিয়ে। নৌযাত্রায় অংশ নিয়ে নাট্যজনরা নদী রক্ষায় গাইলেন জাগরণের গান। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ৪০ বছর পূর্তির এমন আয়োজন ছিল দিনভর।

‘হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনেÑ স্লোগানকে সামনে রেখে নৌবহরটি দুপুর ১২টার দিকে বড়ালের মোহনায় পৌঁছায়। সেখানে চারঘাট গ্রাম থিয়েটারের সদস্য এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের স্বাগত জানান। পরে চারঘাট পদ্মা বড়াল থিয়েটারের ইলামিত্র মঞ্চ থেকে সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালিটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদের হলরুমে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

নৌযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘নদী আমাদের সংস্কৃতির উপাদান। মানুষ তো আছে, সঙ্গে নদী, পাখি থাকে, বৃক্ষ থাকে। আমরা মনে করি সবকিছু নিয়ে তো বাংলাদেশ-পুরো পৃথিবী। এগুলো ধ্বংস করার অধিকার কারও নেই। এর মধ্যে থেকে উঠে এসেছে আলকাপ, এর মধ্যে থেকে এসেছে গম্ভীরা, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মারফতি। সুতরাং এগুলোকে স্বাধীন, মুক্ত বাংলাদেশে-দাবি রাখে নিজস্ব শিল্প নীতি, নিজস্ব নাট্য নীতিতে আধুনিক চর্চার। সেজন্য নৌকায় করে যে নৌযাত্রা, তাতে একটা বার্তা দেওয়া এই নদীকে রক্ষার। পাশাপাশি নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরা।’

দুপুরে ইলামিত্র মঞ্চে আয়োজন করা হয় বাংলার আলকাপ, গম্ভীরা, মনসামঙ্গল ও মাদারের গান। সেখানে আলোচনা সভায় নাসির উদ্দিন ইউসুফের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হক, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হসান ময়না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রেসিডিয়াম সদস্য লুৎফর রহমান, চারঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের যুগ্ম সম্পাদক কামারুল্লাহ সরকার ও প্রদীপ কুমার আগারওয়াল।