ঢাকা | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ - ৬:২৭ অপরাহ্ন

গলছে এশিয়ার হিমবাহ, বিপন্ন শতকোটি মানুষের জীবন

  • আপডেট: Thursday, July 21, 2022 - 9:20 pm

 

অনলাইন ডেস্ক:  তীব্র তাপদাহে ক্রমাগত গলছে হিমালয়ের বরফ, যার উপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ৷ বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী অন্য অঞ্চলের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে হিমালয়৷

বন্যার প্রকোপ গত মে মাসে উত্তর পাকিস্তানের হাসানাবাদের হিমবাহী হ্রদের পানি উপচে বন্যা সৃষ্টি হয়৷ ভেসে যায় বাড়িঘর৷ ধ্বংস হয় দুইটি জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও একটি সেতু৷ এতে ৭৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷

উভয় সংকট এই পার্বত্য অঞ্চলে অর্ধশত কোটি মানুষের বসবাস৷ জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জন্য ডেকে আনছে নানা ধরনের বিপদ৷ হিমবাহের বরফ গলায় তারা পড়ছেন উভয় সংকটে৷ মে মাসে পাকিস্তান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৩৩টি হিমবাহী হ্রদ অস্বাভাবিক গরমের কারণে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। আবার সেখানকার ৭০ শতাংশ মানুষ পানীয় জলের জন্য এই হ্রদগুলোর উপর নির্ভরশীল৷ এর অর্থ হিমবাহ চিরতরে গলে গেলে তারা পানির সংকটে পড়বেন৷

মিঠা পানির বৃহৎ উৎস হিমালয়, কারাকোরাম ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা নিয়ে গঠিত এশীয় পার্বত্য অঞ্চল৷ চীন থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত এই এলাকায় ৫৫ হাজার হিমবাহ আছে৷ উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে পৃথিবীর স্বাদু পানির সবচেয়ে বড় উৎস এটি৷ এই পানি এশিয়ার ১০ টি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় যার উপর নির্ভরশীল ২০০ কোটি মানুষ৷ এরমধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নির্ভরশীল ৭৫ কোটি মানুষের জীবন৷

উত্তপ্ত হিমালয় জাতিসংঘের ইউএনডিপির তথ্য অনুযায়ী, হিমলায় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে না পারলে মধ্য এশিয়ার দুই তৃতীয়াংশ বরফ চলতি শতকের শেষাংশে হারিয়ে যেতে পারে৷ ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্সে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় যেসব দেশ বেশি বিপদে তার দশটিতে আছে পাকিস্তান ও নেপাল৷ ভারত ও আফগানিস্তান আছে শীর্ষ কুড়িতে৷

জলবিদ্যুৎ হুমকিতে গলতে থাকা হিমবাহের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ হিমালয় অঞ্চলের ২৫০ টির বেশি হাইড্রোলিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হুমকিতে আছে৷ সেগুলো নতুন করে নকশা করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না৷ কেননা বরফ গলে গেলে পানি সংকটে পড়বে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো৷

দূষণরোধের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ু দূষণ রোধ হিমবাহ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে৷ এই অঞ্চলে কালো কার্বনের পেছনে ইটের ভাটা ও জীবাষ্ম জ্বালানি দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দায়ী৷ দ্বিতীয় বৃহৎ দূষণকারী ডিজেল গাড়ি, যার কারণে সাত থেকে ১৮ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়৷

দায় কার হিমালয়ের বরফ গলার পেছনে ভূমিকা রাখছে সার্বিকভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি৷ কিন্তু এজন্য ভুক্তভোগী হওয়া দেশগুলোর দায় সামান্যই৷ যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাস নিঃসরণে পাকিস্তানের ভূমিকা মাত্র এক শতাংশ৷ অন্যদিকে আফগানিস্তান ও নেপালের দায় আরো কম৷ কিন্তু এই দেশগুলোতেই বন্য, ভূমি ধস কিংবা পানির সংকট ক্রমশ বাড়ছে৷ সূত্র: ডয়েচে ভেলে