ঢাকা | এপ্রিল ২৮, ২০২৪ - ৫:০৯ অপরাহ্ন

বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা চান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা 

  • আপডেট: Tuesday, March 5, 2024 - 9:19 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার দিনব্যাপী স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

ভর্তিচ্ছুদের পদাচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আবাসন সংকট, খাবার ও যানবাহনে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন।

তাদের দাবি, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা হলে সময়, অর্থ ও হয়রানি কমবে। ঢাবি ও চবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা যেন বিভাগীয় শহরে নেওয়া হয়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তারা।

যানবাহন ও খাবারের দাম বৃদ্ধি

ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে মাত্রারিক্ত রিকশা ও ইজিবাইকের ভাড়া এবং খাবারের দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা বলছেন, রিকশাওয়ালারা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা গন্তব্যে যেতে রাজি হচ্ছেন না।

এছাড়া যাত্রীদের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা থাকার পরেও অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

বিনোদপুর গেট থেকে স্টেশন বাজারের ২০ টাকার ভাড়া ৮০-১২০ টাকা, কাজলা গেট থেকে কৃষি অনুষদের ৩০ টাকার ভাড়া ১২০-১৬০ টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। এমন ঘটনার ভুক্তভোগী হাফিজুর রহমান। তিনি নেত্রকোনা থেকে এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে তেমন কিছুই চিনি না। ফলে রিকশাওয়ালা যা চাচ্ছে সেটাই দিতে হচ্ছে। কিন্তু গন্তব্যে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে বেশি রেখেছেন।’ তবে কয়েকজন রিকশাওয়ালা জানান, যানজটের কারণে গন্তব্যে যেতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। ফলে নিরুপায় হয়ে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানিয়ে দিলেও পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরে অবস্থিত ভ্রাম্যমাণ হোটেলগুলোতে ৩০টাকা মূল্যের ব্রয়লার মুরগি ৬০টাকা, ৭০টাকার সোনালি মুরগি ১০০টাকা, ৩০টাকার রুই মাছ ৪০টাকা, ১৫টাকার রান্না ডিম ২৫টাকা, ৫টাকার আলু ভর্তা ১০টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে খাবারের দাম ও মান ঠিক রাখতে প্রক্টরিয়াল বডি ও ভোক্তা অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত যৌথ অভিযান চালিয়েছে।

বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা চান অভিভাবকরা

ময়মনসিংহ নগরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে বাসে করে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে রাজশাহীতে পৌঁছান। রাজশাহীতে কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকায় সকাল পর্যন্ত বাসেই অবস্থান করেন। তার মেয়ে সি ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় বসেছেন।

দুপুর দেড়টার দিকে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়ের পরীক্ষার জন্য আজ ভোরে রাজশাহীতে এসেছি। কিন্তু পরিচিত কেউ না থাকায় বাকি সময় বাসেই কাটিয়েছি। মেয়ের পরীক্ষা তৃতীয় শিফটে হচ্ছে। এজন্য সকাল থেকে অভিভাবকদের বসার স্থানে অপেক্ষা করছি। এতদূরে পরীক্ষা হওয়ায় বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যাতায়াত, খাবার, অর্থ ও আবাসনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’ ভোগান্তি কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

গত ২ মার্চ পটুয়াখালী থেকে রাজশাহীতে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছেন শাহজাহান মিয়া। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন তার ছেলে। আগাম হোটেল বুকিং না দেওয়ায় থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে দূর-আত্মীয় এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে হলের কক্ষে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘আগাম হোটেল বুকিং না দেওয়ায় কোন হোটেল পাইনি। এক শিক্ষার্থীর কক্ষে কোনরকম কষ্ট করে থাকছি। যানবাহনের ভাড়াও কয়েকগুন বেশি রাখা হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে।’

ভর্তি পরীক্ষার আগে গত ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তৎকালীন প্রশাসন, হাইকোর্টের কিছু নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছি না। তবে আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো কাটিয়ে উঠছি। আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হলে রাজশাহীসহ পাঁচ বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সোনালী/জেআর