ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ - ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

বিয়ের ৩ মাস রাবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

  • আপডেট: Tuesday, September 27, 2022 - 11:14 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বিয়ের ৩ মাস পর চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ছন্দা রায় নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রী। গত সোমবার দুপুর ১২টায় ঢাকার মুগদা থানার মানিকনগর এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ছন্দার বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। স্বামী উত্তম কুমার রায়ের সঙ্গে ঢাকার মুগদায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। রাবির অর্থনীতি বিভাগের ২০১৫-১৫ সেশনের ছাত্রী ছিলেন ছন্দা।

ছন্দার মেজ বোন দ্বীপা রায় বলেন, ‘তিন মাস আগে পছন্দের ছেলের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেই। তার স্বামী উত্তম কুমার বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত। চাকরি সূত্রে স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকতো আমার বোন। সোমবার বিকেলে নিজ রুমের ফ্যানের রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বোন মৃত্যুর আগে একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছে। তাতে লিখা ছিল- আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমি তার হাতের লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি এটা ওরই হাতের লেখা।’

জানতে চাইলে ছন্দা রায়ের স্বামী উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আমি অফিস থেকে দুপুরে ছন্দাকে বারবার ফোন দিচ্ছিলাম। কিন্তু সে রেসপন্স করেনি। বিকেলে এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে আটকানো। বারবার বলার পরও দরজা খুলছিল না। আমি বাসার কেয়ারটেকারকে নিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি আমার স্ত্রী সুইসাইড করেছে।’

এ বিষয়ে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘সোমবার বিকেলে ছন্দা রায় নামের এক নারী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। মরদেহ উদ্ধারের সময় একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।’

‘একটি ইউডি মামলার এজাহার দিয়েছে নিহতের পরিবার। আমরা মামলা নথিভুক্ত করেছি। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, বলেন মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর।

এদিকে, এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘মৃত্যুর খবর শুনে আমরা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছি না। তিনমাস হলো বিয়ে হলো ছন্দা রায়ের। এরই মধ্যেই সে আত্মহত্যা করেছে। কী এমন হয়েছে তার সঙ্গে জানি না। তার মৃত্যুর জন্য সমাজ, পরিবার ও তার স্বামী দায়ী।’

এদিকে ছন্দা রায়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন থেকে তারা এই দাবি জানান।

কর্মসূচিতে বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান অনুসারে দেখতে পাই, ছন্দার বয়সে এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো নয়। সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছে। তার অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা খারাপ ছিল না। এ অবস্থায় সদ্য বিয়ে করা একটা মেয়ে কোনো অবস্থাতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। এটাকে আত্মহত্যা আমরা বলতে পারি না। নিশ্চয়ই এর পেছনে অনেক গভীর কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে। তাই আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যাঁরাই এর পেছনে জড়িত তাঁদের সর্বোচ্চ বিচার আমরা আশা করছি।

ছন্দার সহপাঠী আরিফা আক্তার বলেন, ‘সে খুবই হাসিখুশি একটা মেয়ে ছিল। বিয়ের মাত্র আড়াই মাসে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিল, তা আমাদের মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। সে নিশ্চয়ই কোনো মানসিক কষ্টে ছিল, এ জন্য এত বড় একটা পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই আমরা চাই যে বিষয়টার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

মানববন্ধনে ছন্দা রায়ের সহপাঠী জাবেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ছন্দার সহপাঠী ও বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। কর্মসূচিতে বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ও সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন।