ঢাকা | অক্টোবর ১৮, ২০২৪ - ১০:০০ পূর্বাহ্ন

এমপির ডিও ও স্বাক্ষর জাল করে পৌর মেয়রের ট্রেন ভ্রমণ

  • আপডেট: Tuesday, August 23, 2022 - 11:38 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের ডিও (চাহিদাপত্র) ও স্বাক্ষর জাল করে পৌর মেয়র ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। গত সোমবার রাতের ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের চারটি বাথের (কেবিন) টিকেট নেয়া হয়। তবে এমপি আয়েন উদ্দিন বলছেন, তার স্বাক্ষর ও ডিও লেটার জাল করে এই কাজ করা হয়েছে।

ওই ট্রেনে তিন যাত্রীর মধ্যে ছিলেন— মোহনপুরের কেশরহাট পৌরসভার মেয়র মো. শহিদুজ্জামান ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম। কিন্তু এমপি আয়েন উদ্দিনের পরিবারের নামে এই টিকিট নেয়া হয়। এমপি আয়েন উদ্দিন বিষয়টি জেনে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি কাউকে ট্রেনের টিকেটের জন্য কোনো ডিও দেন নি। তার সাক্ষর জাল করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে তিনি পশ্চিম রেলের ব্যবস্থাপককে অনুরোধ জানিয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বলেন, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন সপরিবারে ঢাকায় যাবেন বলে একটি ডিও দেন। ফলে তাকে ধূমকেতুর একটি ডাবল কেবিন দেওয়া হয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, এমপি আয়েন উদ্দিন সাহেব যাচ্ছেন না। তার জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে যাচ্ছেন অন্য যাত্রীরা। বিষয়টি এক ধরনের জালিয়াতি।

তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে রেলের কেউ জড়িত কিনা তিনি খতিয়ে দেখছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানিয়েছেন।

রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত রোববার রাত ১১টার দিকে আকতার আলী স্টেশনের বুকিং সহকারী ফয়সাল কবিরের কাছে ডিও লেটারটি দিয়ে যান। এমপির প্যাডে ওই ডিওতে লেখা ছিল, পরিবার নিয়ে এমপি ঢাকা যাবেন। তাই একটি ডাবল কেবিনের টিকিট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তিনি জোর সুপারিশ করেছেন। এতে এমপির স্বাক্ষর ও সিলও ছিল। এই ডিও পাওয়ার পর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মোমিন গত সোমবার রাতের ঢাকা-রাজশাহী রুটের ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ক’ বগির ৭,৮, ৯ ও ১০ নম্বর আসনের ডবল কেবিনের টিকিট বরাদ্দ করেন। এসব টিকিট রাখা হয় আবদুর রশিদ নামের আরেক বুকিং সহকারীর কাছে। সোমবার রাতে যাত্রার আগে এক ব্যক্তি ওই টিকিট নিতে কাউন্টারে আসেন। এ সময় রেল শ্রমিক নেতা আকতার বুকিং সহকারী আবদুর রশিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওই টিকিটগুলো দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে ডিও কে দিয়েছে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আকতার হোসেনকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

এরপর এমপি আয়েন উদ্দিন পরিবার নিয়ে আসছেন বলে স্টেশনে প্রস্তুতি রাখা হয়। ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় কেবিনটি। উপস্থিত থাকেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারও। কিন্তু দেখা যায়, যাত্রা শুরুর আগেও এমপি আসছেন না।

এরই মধ্যে প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মোমিন ফোন করেন এমপির ব্যক্তিগত সহকারী ইকবাল হোসেনকে। এমপির সঙ্গে কথা বলে ইকবাল জানান, আগের দিনই এমপি ঢাকা থেকে ফিরেছেন। আবার যাওয়ার জন্য তিনি কোনো ডিও দেননি। এটি ভুয়া। এর মধ্যে ট্রেনের যাত্রা শুরুর সময় হলে দেখা যায়, ওই কেবিনে গিয়ে উঠছেন তিন ব্যক্তি। মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু ওই ডিওর ব্যাপারে তারা কোনো সদুত্তর দেননি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মেয়র মো. শহিদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জবাব দেননি। জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই কেবিনে তিনি ঢাকা গিয়েছেন। কিন্তু টিকিট কীভাবে বরাদ্দ হয়েছে তা জানেন না। ভুয়া ডিও লেটারের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।