ঢাকা | অক্টোবর ৮, ২০২৫ - ২:৪১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

চলনবিলে মাছ সঙ্কট, হুমকির মুখে শুঁটকিশিল্প

  • আপডেট: Tuesday, October 7, 2025 - 9:49 pm

দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি:

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি চলনবিলে মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শুঁটকিশিল্প। মাছের অভাবে সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের শুঁটকি চাতালে কর্মরত শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছেন।

প্রায় ১২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২২টি জলাশয় ও ১৬টি নদীর সমন্বয়ে চলনবিলের অবস্থান। এই চলনবিল ঘিরে তিন জেলার ৯টি উপজেলায় গড়ে ওঠা শুঁটকিপল্লীতে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। চাতালগুলোতে ভোর থেকেই শত শত নারী-পুরুষ মাছে লবণ মাখানো, শুকানো, উল্টে-পাল্টে দেয়া, বাছাইসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন।

এসব চাতালে দেশি প্রজাতির রুই, কাতলা, মাগুর, শিং, কৈ, পাবদা, পুঁটি, চিতল, বাঘাইড়, বোয়াল, গজার, এবং টেংরা মাছ শুঁটকি করা হয়। এখানকার শুঁটকি রাজধানী ঢাকা, সৈয়দপুর, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। গত বছর চলনবিলে প্রায় ৮০০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার টন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চাতাল মালিক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালীদের ইন্ধনে চলনবিলে বাদাই জাল দিয়ে পোনা মাছ নিধন করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি চলনবিলজুড়ে অতিরিক্ত পুকুর খনন করায় মাছের অবাধ বিচরণও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও খরা মৌসুমে পানি সেচ দিয়ে মাছ ধরার কারণেও বিলের মাছ দিনদিন কমছে। এতে খরচ বাড়লেও উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাতাল ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে।

তাড়াশ উপজেলার ঘরগ্রামের শুঁটকি চাতাল মালিক জহরুল ইসলাম ও আবুবক্কার জানান, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাছ সংগ্রহের মৌসুম। কিন্তু চলতি বছর আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মাছের সঙ্কট থাকায় উৎপাদন অনেক কম হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছি।

শুঁটকি ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, তাড়াশের মহিষলুটি মৎস্য আড়ত ঘিরে আশপাশে ২৫টি শুঁটকির চাতাল ছিল। এ বছর মাত্র কয়েকটি চাতালে শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছের অভাবে ব্যবসা গুটিয়ে অনেকে চলে গেছেন। শুঁটকি ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন একটি শুঁটকির চাতালে ৩০০ মণ মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজার ও মৎস্য আড়ত ঘুরে ৩০-৫০ মণের বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে শুঁটকি উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মহিষলুটি মৎস্য আড়তদার গোলাম কিবরিয়া বলেন, মাছ সঙ্কটের কারণে অনেক চাতাল ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় চাতালের কাজে জড়িত প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। চাতাল শ্রমিক শেফালী ও মোবারক হোসেন বলেন, এসব চাতালে কাজ করলে প্রতিদিন নারী শ্রমিকরা ১৫০ টাকা আর পুরুষরা ৩০০ টাকা মজুরি পান। তবে এ মৌসুমে মাছ সংকট থাকায় অনেকেই কাজ পাননি।

তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোকারম হোসেন বলেন, দেশ-বিদেশে চলনবিলের শুঁটকির সুনাম রয়েছে। তবে মা মাছ নিধন, কীটনাশক ব্যবহার ও প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এই বিলে মাছের উৎপাদন প্রতি বছর কমে যাচ্ছে। এ বছর কয়েক দফায় পানি আসা ও দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় সঙ্কট আরও বেড়েছে। গত বছর এই উপজেলায় ১৪৩ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু মাছ সঙ্কটের কারণে এবার ৩০/৪০ টন কম উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।