ঢাকা | অক্টোবর ৪, ২০২৫ - ১:৩৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

মসজিদ কমিটির নদী ইজারা: জীবিকা নিয়ে দুচিন্তায় শতাধিক জেলে পরিবার

  • আপডেট: Friday, October 3, 2025 - 10:15 pm

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ইতিহাস-ঐতিহ্যে ঘেরা গোহালা নদী। এই নদীর প্রায় আড়াই কিলোমিটার মাছ চাষের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার উধুনিয়া বাজার এলাকায় উন্মুক্ত দরে এই নদীর আড়াই কিলোমিটার অংশ ইজারা দেয় উধুনিয়া বাজার জামে মসজিদ কমিটি। এর আগে দরপত্রে অংশ নিতে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করানো হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নদীর আড়াই কিলোমিটার ইজারায় ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লাখ ৬২ হাজার টাকা ডাক ওঠে। এতে উধুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী মোল্লা সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা নেন। শর্ত অনুযায়ী ইউসুফ আলী মোল্লা এখন থেকে টাকা ছাড়া নদীর পানি ব্যবহার ও মাছ শিকার করতে দেবেন না। ফলে জীবন-জীবিকা নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছে স্থানীয় শতাধিক জেলে পরিবার।

গোহালা নদী দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায় অবস্থিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৯৩ মিটার। এটি একটি স্থানীয় নদী, দেখতে অনেকটা সাপের মতো। যা জনজীবন ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। স্থানীয় জেলে আব্দুল মান্নান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত ৪০ বছর ধরে তিনি নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মাছ শিকার করতে কেউ তাকে বাধা দেননি। তবে এবার তাকে নদীতে নামার আগে অন্তত ১০-১৫ হাজার টাকা ইজারাদারের কাছে জমা দিতে হবে।

অন্যথায় তিনি নদীতে মাছ শিকার করতে পারবেন না। ইসমাইল হোসেন নামে আরেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গোহালা নদীতে মাছ ধরছি। কেউ ইজারা দেয়নি। কিন্তু এ বছর নদীও নাকি ইজারা দিয়েছে। আমরা এখন কীভাবে সংসার চালাবো? স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, মসজিদ কমিটি নদী ইজারা দিতে মাইকিং করেছিল। সেই মোতাবেক বাজারে সবার উপস্থিতিতে এক লাখ ৬২ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে।

ইজারা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, সবার উপস্থিতিতে এক লাখ ৬২ হাজার টাকায় নদীর আড়াই কিলোমিটার ইজারা পেয়েছি। এটা নিয়ে মিথ্যা বলার কিছু নেই। এ বিষয়ে উধুনিয়া বাজার জামে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, মসজিদের উন্নয়ন করতে পুরো নদী না, নদীর কিছু অংশ ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারা পাওয়া ব্যক্তিকে কিছু টাকা দিলেই জেলেরা মাছ ধরতে পারবেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, নদী ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, সরকারি জলমহাল নিয়ম অনুযায়ী ইজারা দেয়া হয়। তবে নদী ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই। যদি কোনো ব্যক্তি বা মসজিদ কমিটি নদী ইজারা দেয়, তাহলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।