৯ দফা দাবিতে রুয়েট প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের তালা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় কোডিং সিস্টেম চালুসহ ৯ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় কোডিং সিস্টেম চালু করতে হবে, যাতে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, এবিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; সেমিস্টারের রেজাল্ট ও গ্রেডশিট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে ও খাতা রিভিউ করার সুযোগ দিতে হবে; রুয়েটের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গত ফ্যাসিস্ট আমলে বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তাঁদের অনতিবিলম্বে সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কার করে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। তিন থেকে চার দিনের ক্লাস নিয়ে পুরো সেমিস্টারের উপস্থিতি গণনা করা যাবে না। যদি শিক্ষকের ব্যস্ততা/অনুপস্থিতির কারণে কোনো ক্লাস মিস যায়, তবে সে ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীকে ওই দিনের অ্যাটেনডেন্স দিতে হবে এবং কোনোদিন অতিরিক্ত ক্লাস নিলে তা একটা ক্লাসের অ্যাটেনডেন্স হিসেবে কাউন্ট করতে হবে; প্রতি মাসে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সেশন আয়োজন করতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের নিয়ে প্রতি মাসে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার আয়োজন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মধ্যে আরও আছে, নগরের হজোর মোড়ের ঘটনায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি, অতি দ্রুত সেই মামলার বাকি কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং রুয়েট ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে; ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য করার দায়ে গোলাম মোস্তাকিম ও সিভিল অনুষদের ডিন কামরুজ্জামান রিপনসহ অভিযুক্ত সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি সদাচরণ করতে হবে এবং শিক্ষকদের কার্যক্রমের মূল্যায়ন ও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। অনতিবিলম্বে গত আগস্টে জমাকৃত ১২ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এর আগে একই দাবি নিয়ে সকাল ১০টার দিকে রুয়েটের শহিদ মিনারে জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তাঁরা ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরে তাঁরা বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে দাবি মানার আশ্বাস জানিয়ে সেখানে উপস্থিত হন রুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক রবিউল ইসলাম সরকার, তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জানান, রুয়েটে কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় শিক্ষকদের। তাঁরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাঁদের কারণে স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সাফিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা নিজস্ব ক্ষোভ এবং প্রতিহিংসার জেরে শিক্ষার্থীকে এক্স গ্রেড দিয়েছে বা ফেল করিয়ে দিয়েছে। এটা একজন শিক্ষার্থীর উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেনে নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা যে দুজন শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে সেটি আজকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার পাশে হজোর মোড়ে স্থানীয়দের হামলায় রুয়েটের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া গত ১০ জানুয়ারি রাতে নগরের একটি ছাত্রাবাস থেকে রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।