রাকাবকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) একীভূত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে রাজশাহী নগরে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে এই কর্মসূচি পালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট, রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সংহতি প্রকাশ করে আরও কয়েকটি সংগঠন অংশ নেয়।
৪ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই দুটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারি এ সিদ্ধান্তের কথা আগের দিন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাকাবকে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বিডিবিএলকে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে। তবে রাকাবকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য ১৬ এপ্রিল প্রথম প্রতিবাদ শুরু হয় রাজশাহীতে। এরপর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আজকের কর্মসূচিতে রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামাণিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দিলীপ কুমার ঘোষ, রাজশাহী জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ন্যাপ রাজশাহী জেলার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসান খন্দকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম, স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত প্রমুখ।
দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রাজশাহী অঞ্চলে আলাদা করে করা হয়েছিল। এটা করা হয়েছিল এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে এখনো হয়নি। এখনো এখানে শিল্পকারখানা এখানে সেভাবে গড়ে ওঠেনি। একটি ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে এই রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এই ব্যাংককে কেন একীভূত করা হচ্ছে?
সাইদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে। সাধারণ কৃষকও এই সুবিধা নিচ্ছেন। এই ব্যাংক অনেক সমস্যা কাটিয়ে এখন শক্তিশালী। তাঁরা চান, এই ব্যাংক এককভাবে এ অঞ্চলের মানুষের সেবায় থাকুক। এ জন্য সবাইকে তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংক অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। এই ব্যাংকের কিছু জায়গায় যতগুলো লোকসানি শাখা আছে, তা–ও দূর হয়ে যাবে। কিন্তু পক্ষান্তরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোকসানি খাতের একটি নিমজ্জিত ব্যাংক। একটি শক্তিশালী ব্যাংককে অসুস্থ ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
এর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলকে অবহেলা করা হচ্ছে। এটা বীর মুক্তিযোদ্ধারা হতে দেবেন না। যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসা হয়, তাঁরা উত্তরাঞ্চলে হরতালের ডাক দেবেন, অনশন করবেন। এরপরও যদি এই আকুতি, আবেদন না মানা হয়, তাহলে উত্তরাঞ্চল থেকে সব খাদ্যশস্য পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
রাকাব সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের শাখাগুলো নিয়ে ১৯৮৭ সালে গঠন করা হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। বর্তমানে রাকাবের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। এর মধ্যে ব্যাংকে আমানত রাখা গ্রাহক আছেন প্রায় সাড়ে ৪৮ লাখ। আর ব্যাংকটি থেকে ঋণ নেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ লাখ।
সোনালী/ সা