অভিযোগের সত্যতা পেল পিবিআই, ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি
অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির উদ্দিন মাহমুদকে মারধর, হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর মামলায় আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার পিবিআই পরিদর্শক মো. মনির হোসেন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এতে পরীমনিসহ জুনায়েদ বোগদাদী জিমিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মেলেনি। বুধবার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, পরীমনিসহ দুজনের বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এখন সাক্ষীরা আদালতে এ মামলার অভিযোগ প্রমাণ করবে। বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই বলছে, ২০২১ সালের ৮ জুন রাতে আসামি পরীমনি অসৎ উদ্দেশে বাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে ফাঁদে ফেলে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে ঢাকা বোট ক্লাবের নিয়ম উপেক্ষা করে ফ্রিতে তিন লিটারের ব্লু লেবেল মদ পার্সেল নিতে না পেরে বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি প্রদান করেন।
পরীমনি ইচ্ছাপূর্বকভাবে বাদীর দিকে এসট্রে ছুড়ে মেরে তার ডান কানের ওপরে মাথায় আঘাত করে জখম করেন। এ ছাড়া আসামিদের ছোড়া ভাঙা গ্লাসের টুকরায় বাদীর বুকে লাল চিহ্নিত স্ক্র্যাচ মার্কযুক্ত জখম করে ও ক্লাবের বারের ভেতরে যত্রতত্র গ্লাস, কাচের বোতল এসট্রে ইত্যাদি ছুড়ে ফেলে তাণ্ডব করে। যার ফলে আসামি পরীমনির বিরুদ্ধে বাদীর আনা ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধ করেছে মর্মে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বারের ভেতরে তাণ্ডব করতে থাকলে সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকীকে বাদী নাসির আসামিদের নিয়ে বার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তখন আসামি জুনায়েদ বোগদাদী জিমি তেড়ে এসে বাদী নাসির মাহমুদকে গালমন্দ করতে করতে এবং হুমকি প্রদর্শনপূর্বক ২/৩টা কিল-ঘুষি মারেন। এতে আসামি জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে বাদীর আনা অভিযোগ মতে ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে বাদীর আনা কোনো অভিযোগের সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০২২ সালের ৬ জুলাই আদালতে মামলাটি করেন ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির উদ্দিন মাহমুদ। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে একই বছরের ১৮ জুলাই এ মামলাটি গ্রহণ করে আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরীমনি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী। সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন দামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমনি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান।
২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে দ্বিতীয়তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। বাদী ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত সোয়া ১টার দিকে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরীমনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী নাসির উদ্দিনকে ডাক দেন এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন।
একপর্যায়ে একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমনি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন।
এতে নাসির উদ্দিন মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। মামলায় আরও বলা হয়, পরীমনি ও তার সহযোগীরা নাসির উদ্দিনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও ভাঙচুর করেছেন। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদীসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
সোনালী/ সা