ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১১:৫০ অপরাহ্ন

রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌপথ চালু হচ্ছে সোমবার

  • আপডেট: Sunday, February 11, 2024 - 9:22 pm

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: প্রায় ছয় দশক আগে ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরে পণ্য আনা-নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। নৌপথটি আবার খুলছে সোমবার।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বেলা ১১টায় সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে এই নৌপথ দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হতো।

তবে নানা কারণে এতদিন এই নৌপথ ও নদীবন্দর বন্ধ ছিল। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত নৌপথটি ৫৯ বছর পর আবার চালু হতে যাচ্ছে। এতে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের হাতছানি দিচ্ছে নৌবন্দরটি। শুরুতেই পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হলেও ভবিষ্যতে এই নদীবন্দর নিয়ে আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে। বাংলাদেশ ভারত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকলের আওতায় সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর উদ্বোধন উপলক্ষে সেখানে সুধী সমাবেশেরও আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। আশা করা হচ্ছে, সোমবার নৌবন্দরটি খুললে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাইলফলক হবে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ ঘাটে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। প্রস্তুত করা হয়েছে পন্টুনও। পাশেই রাখা হয়েছে বিশাল আকৃতির একটি ট্রলার। ওই ট্রলার দিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য পাঠানোর কথা রয়েছে ভারতে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার।

সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের ঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণের পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি। সুলতানগঞ্জের এই পয়েন্টে সাধারণত সারা বছরই গভীর পানি থাকে।

অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌবন্দরটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পণ্য পরিবহন খরচও অনেক কমবে। এছাড়া নৌবন্দরটি চালু হলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সুলতানগঞ্জ ঘাটে কাজের তদারকিতে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, সোমবার এই নৌবন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এখানে নৌ ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিশাল প্রজেক্ট ঘোষণার কথা রয়েছে।

এজন্য এখানকার জায়গাগুলো পর্যায়ক্রমে অধিগ্রহণ করা হবে। এই নৌবন্দরের সঙ্গে সরাসরি মহাসড়কের যোগাযোগ থাকবে। আর ভবিষ্যতে এই নৌরুটে নাব্যতা নিয়েও কোনো সমস্যা হবে না। পণ্য পরিবহন শুরু হলে পদ্মায় ড্রেজিং করা হবে। তখন আর এই নদী পথে চর পড়বে না।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রটোকলের আওতায় নদীপথে দুই দেশের মধ্যে কম খরচে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে নদীপথে বাণিজ্য খুলবে।

এর ফলে বাংলাদেশ-ভারত এ দুই বন্ধু দেশের ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। দুই দেশের বিভিন্ন পণ্য আনা-নেওয়ায় সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌরুট হয়ে উঠতে পারে লাভজনক একটি ক্ষেত্র।

বিশেষ করে ভারত নৌপথ দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহী। বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের সাতটি প্রদেশ আছে, সেগুলোতে সুলভে মালামাল পৌঁছে দিতে তারা নৌপথে বাণিজ্য করতে চায়। নৌবন্দরটি চালুর মধ্যে দিয়ে সেই পথ সুগম হলো। এভাবেই রাজশাহী শিল্প-বাণিজ্যেও এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা মেয়র লিটনের।

এদিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আজ সোমবার নৌবন্দর উদ্বোধন উপলক্ষে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।

এ উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকাল ৪টায় উপজেলা সদর ডাইংপাড়া ফিরোজ চত্বরে বিশাল আনন্দ মিছিলের নেতৃত্ব দেন পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক।

উপস্থিত ছিলেন মাটিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা, বাসুদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদিন জনি প্রমূখ।

সোনালী/জেআর