ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ১১:১৬ অপরাহ্ন

ঢাকায় সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ, সতর্ক র‌্যাব-পুলিশ

  • আপডেট: Friday, October 27, 2023 - 11:00 pm

অনলাইন ডেস্ক: সরকারের পতনের একদফা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে শনিবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা করেছে বিএনপি। সেই সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।

প্রত্যাশা অনুযায়ী দুই দলকে অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সঙ্গে ২০টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন এ তথ্য জানান।

এদিকে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামীও শাপলা চত্বরে তাদের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ মোট ৩৭টি রাজনৈতিক দলও প্রায় একই সময়ে পৃথক মহাসমাবেশ করার কথা রয়েছে।

একই দিনে রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে থমথমে পরিস্থিতি। বিশেষ করে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সবাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে শহরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। সমাবেশের দিন যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকার প্রবেশপথ গুলোতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির কঠোর অবস্থান। প্রতিটি পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে চলছে পুলিশের চেকপোস্ট। সাধারণ ছুটির দিনে অনেকে পরিবার নিয়ে বের হলেও শুক্রবার কোথাও মানুষের জটলা দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগ নেতাদের হুঁশিয়ারি

বিএনপির পক্ষ থেকে ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে, জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাজধানীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লার মোড়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে বলেছে ক্ষমতাসীন নেতারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা কাউকে আক্রমণ করব না, এই পর্যন্ত করিনি। এবার আমরা সতর্ক পাহারায় আছি, আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা শহর থাকবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের দখলে। সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগমের মাধ্যমে বিএনপির কবর রচনা করা হবে। সারাদেশ থেকে ঢাকায় যে সন্ত্রাসীদের ঢুকিয়েছে বিএনপি, ঢাকাবাসীর শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ওই সব সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা হবে।

বিএনপির বড় জমায়েতের প্রস্তুতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২৮ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে সারাদেশ থেকে গণমানুষের ঢাকামুখী প্রবল তরঙ্গ, স্রোত ধেয়ে আসছে। স্বৈরাচার পতনের আওয়াজ আসছে রাজপথ থেকে। ফুঁসে উঠেছে গোটা দেশবাসী।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সরকারকে একটি বার্তা দিতে চাই। চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায় করতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। মহাসমাবেশে বাধা দিলে এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সরকারের বিদায় ঘণ্টা শুরু হবে। পুরো ঢাকা শহর থাকবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দখলে। মামলাপ্রাপ্ত প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মী ঢাকা শহর দখলে রাখবে।

অনড় জামায়াতে ইসলামী

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো একইদিন সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করতে চায় দলটি। মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠিও দেয় জামায়াত। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনোভাবেই জামায়াতকে সভা-সমাবেশ করতে দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, জামায়াতের মতো অনিবন্ধিত একটি তথাকথিত রাজনৈতিক দলকে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অনুমতি না পেলেও শাপলা চত্বরেই সমাবেশ করবে তারা। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেয়া নয়।

সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

তিন দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে র‌্যাব ও পুলিশ।

র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা ও যে কোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানীতে র‌্যাবের দেড় হাজারের অধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, সংবিধানে যে কোনো রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন, মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ নিরাপত্তাও দিয়ে থাকে। কিন্তু কর্মসূচির আড়ালে কেউ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, সমাবেশকে ঘিরে ঢাকায় লাখ লাখ মানুষের জমায়েত হবে। এ কারণে ঢাকা শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশের টহল টিম। ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করা হচ্ছে।

থমথমে নয়াপল্টন

বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজধানীর নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।

শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিকেলে ভিড় বাড়ে। ফলে এ সময় ফকিরাপুল থেকে নাইটেঙ্গেল মোড়ের রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

দেখা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। তারা থেমে থেমে পুলিশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়ে, একই সঙ্গে পুলিশের সংখ্যাও বাড়ে।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস