এলাকামুখী আওয়ামী লীগের এমপি-নেতারা
অনলাইন ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবারের পবিত্র ঈদুল আজহাই শেষ ঈদ। ঈদ কাজে লাগিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ‘মন জয়ের’ চেষ্টা করছেন এমপি-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পিছিয়ে নেই সাবেক ছাত্রনেতা, আওয়ামীপন্থি সাবেক আমলা, উঠতি ব্যবসায়ীরাও। শেখ হাসিনার উন্নয়ন আর ভোটের বার্তা নিয়ে এখন এলাকামুখী তাঁরা।
‘ঈদ রাজনীতিতে’ বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়নে নেতা-কর্মীদের কোরবানির পশু কিনে দেওয়া, নিজ বাড়িতে বেশি করে গরু-ছাগল কোরবানি করে তা গরিব-অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ, গ্রাম গ্রাম ঘুরে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে নির্বাচনী মাঠ নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
শতাধিক এমপি-মন্ত্রী, মনোনয়নপ্রত্যাশী, সাবেক ছাত্রনেতা, আমলা, ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন সংসদীয় আসনে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি ছয় মাসের কম সময়। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া।
বর্তমান এমপি-মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এমন অবস্থায় পবিত্র ঈদুল আজহাকে কাজে লাগাতে চান তাঁরা।
এ সুযোগে নিজ নির্বাচনী এলাকায় থেকে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার কাজ করবেন। ঈদ উৎসব কাজে লাগিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশে যোগ দিয়ে নির্বাচনী মাঠ নিজের পক্ষে রাখার কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।
এ ছাড়া টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে, তা তুলে ধরে প্রচার-প্রচারণা করবেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।
এ ছাড়া যেসব এমপি-মন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানের জন্য ঈদকে কাজে লাগাতে চান তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘শুধু ঈদ নয়, যে কোনো সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা-উপজেলা নেতা, দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। করোনার সময় সারা দেশের অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ ঈদ।
ঈদে দলের এমপি-মন্ত্রী-কেন্দ্রীয় নেতা এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করবেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক নিজ নির্বাচনী এলাকা ঢাকার মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলানগরের (আংশিক) নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে নেতা-কর্মীদের জন্য বিশেষ ঈদ শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। ঈদের দিন বিকালে ও পরদিন নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন নিজ নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৭ আসনের মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান মাদারীপুরে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। এদিন ছাড়াও পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামের নির্বাচনী এলাকায়, মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়ায় নির্বাচনী এলাকায়, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম তাঁর নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরে কোরবানি দেবেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নির্বাচনী এলাকার গরিব-অসহায় মানুষের জন্য কোরবানির ব্যবস্থা করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নেত্রকোনায়, মির্জা আজম জামালপুরে, শফিউল আলম নাদেল সিলেটে, আফজাল হোসেন পটুয়াখালীতে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাটে ঈদ করবেন। এস এম কামাল হোসেন তাঁর নির্বাচনী এলাকা খুলনার খালিশপুর থেকে সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন। তিনি ঢাকায় ঈদ করবেন। বি এম মোজাম্মেল হক ঢাকায় ঈদ করবেন। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীও থাকবেন চাঁদপুরে নির্বাচনী এলাকায়।
দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগড়ায় পৃথক কোরবানির আয়োজন করেছেন। দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ চাঁদপুরে ঈদ করবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রংপুরে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঢাকায়, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন নরসিংদীতে, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুরে, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঢাকায় ঈদ করবেন। তাঁরা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি ঈদের জন্য যা করণীয় সাধ্যমতো তা করেছেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই সাবেক ছাত্রনেতারা। তাঁরাও আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে এলাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না পিরোজপুর-২ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বাগেরহাট-৪ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন অনেকদিন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এমপি তাঁর নিবাচনী এলাকা গাইবান্ধায় ঈদ করবেন। তিনি সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে এলাকায় লিফলেট বিতরণ করছেন।
ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সংসদীয় আসনের গরিব-অসহায় নেতা-কর্মীদের জন ১১টি গরু কিনেছেন। কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এরশাদ উদ্দিন নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য আটটি গরু কোরবানি দেবেন। গত দুই রমজানের ঈদেও ১০ টাকা লিটার গরুর দুধ বিক্রি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেন।
এটা তাঁর নির্বাচনী গণসংযোগের কৌশল হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। সরকারের উন্নয়ন চিত্র এবং বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে এলাকায় পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপিপুত্র ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমি নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ায় আছি। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এখানেই পশু কোরবানি দেব। ’
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভোটের বার্তা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীরা এখন গ্রামে। তারা ঈদ শুভেচছা বিনিময়ের পাশাপাশি টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের উন্নয়নগুলো তুলে ধরছেন।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘আমি এলাকায় আছি। প্রতি ঈদেই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করি। এবারে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উঠান বৈঠক করব। ’ বাংলাদেশ প্রতিদিন
সোনালী/জেআর