ঢাকা | নভেম্বর ২৮, ২০২৪ - ১১:৩৩ অপরাহ্ন

স্ত্রী নির্যাতন মামলায় জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন

  • আপডেট: Sunday, September 4, 2022 - 11:38 pm

স্টাফ রিপোর্টার: নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) সাবেক কর্মকর্তা এবিএম সাদিকুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত।

রোববার শুনানি শেষে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান চার্জ গঠনের আদেশ দেন। একই সাথে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ও সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১১ (গ) ধারায় এই চার্জ গঠিত হয় বলে জানান বাদিপক্ষের আইনজীবী হাসিবুল ইসলাম।

মামলার চার্জশীটের বরাত দিয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী জানান, বেশ কয়েক বছর আগে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারের মজিবুর রহমানে ছেলে এবিএম সাদিকুর রহমানের সঙ্গে মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের নুর হোসেনের মেয়ে সঙ্গীতা মুনমুন লিপি ওরফে শ্যামলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এই দম্পতির তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর সাদিকুর রহমান ইউএনএইচসিআরে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান। ওই সময় থেকেই সাদিকের আচরণ বদলাতে থাকে।

সে মোটা অংকের টাকার মালিক বনে যাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। বিষয়টি ভুক্তভোগী শ্যামলী বুঝতে পেরে তাকে পরকীয়া থেকে সরে আসতে বলেন। এতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় অশান্তি। তখন থেকেই মাঝে-মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা যৌতুকের দাবিতে সাদিক স্ত্রী শ্যামলীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। সাদিকের সঙ্গে নির্যাতনে যোগ দেয় তার বাবা মজিবুর রহমান, ভাসুর শামসুর রহমানুল শামীম, দুই ননদ মাস্তারা বেগম কাকলী ও মোস্তারি আফরোজ শিউলীসহ পরিবারের অন্যরাও।

২০১৮ সালের ১৬ জুন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে স্ত্রীর ওপর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালান সাদিকুর রহমান। সঙ্গে নির্যাতনে যোগ দেন পরিবারের অন্যরা। এক পর্যায়ে শ্যামলীকে শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এলাকার লোকজন উদ্ধার করে তাকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই ভুক্তভোগী শ্যামলী স্বামী সাদিক, শ্বশুর মজিবুরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৩২/১৮)। পরে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তরিত হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হাসিবুল আরও বলেন, আসামিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় ওই সময় মামলাটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালে দীর্ঘদিন নানা কৌশলে প্রধান আসামি সাদিক আদালতে হাজিরা এড়িয়ে যায়। পরে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার আসামিরা আদালতে জামিন আবেদন করলে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক প্রধান আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

তবে এই মামলার অপর চার আসামির জামিন শর্তসাপেক্ষে মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। দুই সপ্তাহ জেলহাজতে থাকার পর প্রধান আসামি সাদিকুর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। পরবর্তীতে ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ নারী নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। বর্তমানে সাকিকুর জাইকার কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাদিপক্ষের আইনজীবী হাসিবুল বলেন, প্রধান আসামি সাদিকুর দাবি করে আসছেন যে, ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরের পরেই নাকি ভুক্তভোগী শ্যামলীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাদিপক্ষ ডিভোর্সের কোনো কাগজপত্র পাননি।