ঢাকা | মে ১৪, ২০২৫ - ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে ঈদে এবার সাড়ে তিন’শ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা

  • আপডেট: Wednesday, March 19, 2025 - 12:07 am

জগদীশ রবিদাস: পবিত্র রমজান মাসের দ্বিতীয় দশক প্রায় শেষের দিকে। রোজার তৃতীয় অর্থাৎ শেষ দশক পার হলেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। আসন্ন এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে রাজশাহীতে জমে উঠতে শুরু করেছে সব ধরনের কেনাকাটা।

তবে পুরোদমে বাজার জমে উঠেছে; সে কথা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাবে না। বিগত বছরগুলোতে রমজানের এই সময়ে রাজশাহীর ঈদের বাজারের যে চিত্র দেখা যায়; এ বছর তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা- বাজারের এই ব্যতিক্রম চিত্র সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে ঈদের সামগ্রিক বাণিজ্যে।

গত বছর রাজশাহীতে ঈদের সামগ্রিক বাণিজ্য পাঁচ’শ থেকে সাত’শ কোটি টাকার হলেও এবারে তা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতামত, এবারের ঈদবাজারে সবমিলে সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে।

এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজশাহীর সিল্কপল্লিও। সপ্তাহখানিক আগ পর্যন্ত স্থবির থাকা বিসিকের শোরুমগুলো সম্প্রতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে ক্রেতা সমাগমে। গত বছরের তুলনায় এবার সিল্কের কাপড় বুনাও বেশি হয়েছে। সিল্ক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা বাণিজ্য হতে পারে।

মঙ্গলবার বিকালে এবং ইফতারের পর রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়া, সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেটসহ কাপড় পট্টি ঘুরে ক্রেতাদের মোটামুটি উপস্থিতি দেখা গেছে। নানা বয়সী ক্রেতা টানতে মার্কেটগুলো সেজেছে রঙিন এবং নতুন সাজে। আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ১৫ তারিখ পর্যন্তও আরডিএতে সেভাবে বেচাকেনা হয়নি। তবে সম্প্রতি গত কয়েকদিন ধরে বেচাকেনা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদের আশা- আগামীকাল ২০ তারিখের পর হয়তো ঈদ বাজারের চিত্র অনেকটা বদলে যাবে। পোশাকে আরডিএ মার্কেটে ক্রেতাদের চাহিদা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্যবসায়ী তানভির সোহেল বলেন, মার্কেটে অধিকাংশ শো-রুমে আছে রেডিমেড পোশাক।

এবার তাদের সংগ্রহের মধ্যে পাকিস্তানি ক্যাচ মেলনের চাহিদাই মূলত বেশি। ক্যাচ মেলনের মূল্য ধরা হয়েছে- দুই হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পাকিস্তানি জর্জেটও। এই জর্জেট বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।

গতকাল সাহেব বাজার ও আরডিএ মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার দুই পারের ফুটপাতেও দেখা গেছে মানুষের ভিড়। বেচাকেনা জমতে শুরু করায় এসব এলাকায় ঠিকমতো হাঁটার জায়গাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফুটপাতগুলোতে নানা রকম ভ্যান ও ছোট চকিতে শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা, টিশার্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে ছোট-বড় সাইজের জুতা, ছোট বাচ্চাদের কাপড়গুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

এই দুই স্থান বাদেও শহরের গণকপাড়া, গোরহাঙ্গা রেলগেট, সিরোইল বাস স্ট্যান্ড, কোর্টবাজার, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতেও চলছে ঈদের ব্যবসা। সরেজমিন ফুটপাতের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়; সেখানে বেশি ভিড় করছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা। ঈদে পোশাকের মূল কেনাকাটা তারা ফুটপাট থেকেই বেশি করছেন।

ফুটপাতে পোশাক কিনতে আসা এক নারী জানান, তিনি তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলের জন্য জামা কিনেছেন। তার স্বামী রিকশাচালক। পরিবারের আয় সীমিত হওয়ার কারণে ঈদের বাড়তি খরচ মেটানো তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষায় তাই-তো তারা ঈদ মার্কেটের জন্য ফুটপাতকেই বেছে নিয়েছেন।

এদিকে, ঈদকে শহরের শপিংমলগুলোও সেজেছে নিজ-নিজ স্বত্তায়। শুরুর দিকে শপিংমলগুলোতেও খুব একটা ভিড় না থাকলেও ১৫ তারিখের পর থেকে বেড়েছে ক্রেতা সমাগম। আভিজাত্য ব্রান্ড যেমন- আড়ং, লারিভ, টপ টেন, ইনফিনিটি, রিচম্যান, ইজি, জেন্টেল পার্ক, বিশ্ব রং, গ্রামীণ চেক সেইলর, সারা, থিম ওমর প্লাজাসহ বিভিন্ন মলে ভিড় বেড়েছে।

শোরুমগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, ফ্রক, গেঞ্জিসেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে।

অপরদিকে, ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জি পল্লিতেও। ফ্যাশন-সচেতন আর রুচিশীল ব্যক্তিরা ছুটছেন টেইলার্সে। আগেভাগে নিজেদের পছন্দের জামা-কাপড় বানিয়ে রাখছেন তারা। এজন্য নগরীর সাহেববাজারসহ নিউমার্কেট ও কোর্ট এলাকায় বড়েছে ঈদ কেন্দ্রীক সেলাই কারিগরদের ব্যস্ততা। চাঁদ রাতের আগেই ক্রতাদের হাতে পোশাক তুলে দিতে দিন-রাত কাজ করছেন এই কারিগররা।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, মূলত ঈদের বাজার জমে ওঠা বলতে যা বোঝায় রাজশাহী শহরে তা এখনো হয়নি। ঈদকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবে যে কেনাকাটা চলে, তাই চলছে। আশা করছি- আর কয়েকদিন পর হয়তো ঈদের বাজার জমে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, ঈদের বাজার জমে উঠলেও গত বছরের তুলনায় এবারে ব্যবসা বেশি হবে; এ কথা বলা যাচ্ছে না। গত বছর রাজশাহীতে ঈদ বাণিজ্য ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা হলেও এবারে তা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হতে পারে। এবারের ঈদ বাণিজ্য সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহীর সিল্কপল্লি। এক সপ্তাহ আগেও এই খাতটি স্থবির থাকলেও সম্প্রতি কারখানাগুলোতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। সিল্কের শোরুমগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতা। রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও প্রিয়জনদের জন্য পোশাক কিনতে ক্রেতারা আসছেন। পাশাপাশি পাইকারি ক্রেতাদের আগমনও মোটামুটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিগত বছরগুলোর মতো এবারও রেশমের তৈরি পোশাকে এসেছে বৈচিত্র্য এবং নতুনত্ব। নজরকাড়া বাহারি ডিজাইন আকৃষ্ট করছে সব বয়সি ক্রেতাদের। তারা পছন্দের পোশাক খুঁজছেন এ শোরুম থেকে ওই শোরুম।

তবে ক্রেতারা জানান, গত বছরের চেয়ে পোশাকের দাম এবার একটু বেশি। রাজশাহী সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ঈদ-নববর্ষ ঘিরে প্রচুর পরিমাণে পোশাক দোকানে তোলা হচ্ছে। ডিজাইনেও রয়েছে নতুনত্ব।

রেশমের পাঞ্জাবি ও শাড়ি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হলেও চাহিদা বাড়ছে থ্রিপিস, শার্ট ও ফতুয়ার মতো পোশাকের। সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকার রেশম পোশাক মিলছে নগরীর শোরুমগুলোতে। ক্রেতারা বলছেন, সিল্কের শাড়ির প্রতি নারীদের ঝোঁক বাড়ছে। দামও তুলনামূলক স্বস্তায় পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, গত ১৫ তারিখ পর্যন্ত সিল্কের ব্যবসা সেভাবে জমেনি। টুকিটাকি কেনাবেচা চলছিল। তবে সম্প্রতি ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে বেচাবিক্রি বেড়েছে। আগামী কয়েকদিনে বিক্রি আরও বাড়বে। গত বছরের তুলনায় এবার সিল্কের কাপড় বুনাও বেশি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবার ঈদে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ব্যবসা করবেন সিল্ক পোশাক ব্যবসায়ীরা।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS