রাজশাহীতে নববধূকে দেখার আগেই সৌদিতে মৃত্যু যুবকের
অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর বাগমারার রুবেল হোসেন ৬ বছর আগে যান সৌদিতে। ৯ মাস ৬ দিন আগে মোবাইল ফোনে বিয়ে করেন পাশের গ্রাম বারিহাটির মরিয়ম বিবি রিপাকে। সংসার করার আগে সৌদিতে পুড়ে নিহত হন তিনি।
স্বামী হারানো বিষয়টি মানতে পারছেন না নববধূ রিপা। তাই আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘স্বামীকে দেখলাম না। সংসারও হলো না। তার আগেই চলে গেলেন তিনি। আমি কিভাবে বাঁচব?’
শুক্রবার সৌদি আরবে আগুনে পুড়ে নিহত ৯ জনের ৪ জনই রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৩ জন উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের। অপরজন গনিপুর ইউনিয়নের কাতিলা বড়মাধাইমুড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
নিহতরা হলেন, জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম (৪৫), জফির উদ্দীনের ছেলে রুবেল হোসেন (২৬), শাহাদত হোসেনের ছেলে আরিফ (২৭), আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার (৩৮)।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় এক সোফা তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে রাজশাহীর ৪ জন নিহত হয়েছেন।
ছেলে হারানোর বিষয়টি মানতে পারছেন নিহত রুবেল হোসেনের বাবা জফির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘৬ বছর আগে ঋণ করে ছেলেকে বিদেশে পাঠানো হয়। কয়েক মাস আগে মোবাইল ফোনে পাশের বারিহাটি গ্রামের রিপা বিবির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্ত্রীর সঙ্গে তার দেখাও হয়নি। কীভাবে মানব এই মৃত্যু?’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তবে নিশ্চিত হতে পারিনি। শনিবার সকালে সৌদি থেকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।’
আট মাস আগে সৌদিতে যান আরিফ। তার পরিবার জানায়, ঋণ করে আরিফ সৌদিতে গিয়েছিলেন। আশা ছিল, এবার পরিবারে অভাব দূর হবে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ হওয়ার আগেই তিনি চলে গেল না ফেরার দেশে।
নিহত সাজেদুল ইসলাম আট বছর ধরে আছেন সৌদি আরবে। তার মাধ্যমে রুবেল ও আরিফ সৌদিতে যান। সাজেদুল এক কন্যা শিশুর বাবা।
ঝিকরা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতদের পরিবার খুবই দরিদ্র। পরিবারের অভাব ঘুচাতে তারা বিদেশে গিয়েছিলেন। তবে পরিবারের সচ্ছলতা দূর করার আগেই দুর্ঘটনায় নিহত হলেন। প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। আমরা পরিবারগুলোর পাশে আছি।’
বাগমারা উপজেলার গনিপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের ফিরোজ আলী সরদার (৩৯) ছয় বছর আগে সৌদি যান।
তার বাবা আনিসুর রহমান জানান, ছেলে কিছু টাকা জমিয়েছিল। আর কিছু টাকা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার খবরে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিহতদের বাড়িতে যান। পরিবারগুলোকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
বাগমারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী জানান, নিহতদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, সৌদিতে যোগাযোগ করা হচ্ছে মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ চলছে। পুড়ে গেলেও তাদের মরদেহ শনাক্ত করা যাচ্ছে।
সোনালী/জেআর