ঢাকা | মে ১২, ২০২৪ - ২:৪২ পূর্বাহ্ন

আমেরিকার অনুচরদের ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে

  • আপডেট: Saturday, July 15, 2023 - 9:00 pm

স্টাফ রিপোর্টার: মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বিরোধীতাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এদেশীয় অনুচরদের ক্ষমতা দখলের নীল নকশাকে রুখে দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেছেন, `বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় তাদের কোনভাবেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না।’

আজ শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটরিয়ামে আয়োজিত মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগরের ৭টি সাংগঠনিক থানা ও ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ তৃলমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জামায়াত-বিএনপি ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে পেছনে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমেরিকায় হওয়া গত নির্বাচনের কথা কী প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাহেব ভুলে গেছেন! ট্রাম্প পরাজিত হওয়ার পর সেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি নিজেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। ‘ভোট সুষ্ঠু হয়নি’ উল্লেখ করে তার দলের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তাদের পার্লামেন্ট ভবন দখলের চেষ্টাও করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোন নজির নেই। আমাদের নির্বাচনের পরে পরাজিত কোন রাজনৈতিক দল কখনো সংসদ ভবন দখলে নেয়ার চেষ্টা করেনি। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের মুখে সুষ্ঠু ভোটের কথা অশোভনীয়। তাহলে আমেরিকা আসলে কী চায়! প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাহেবকে প্রশ্ন করি, আপনারা আসলে কী চান? আপনারা এটিই তো চান, যে বিএনপি এদেশের ক্ষমতায় আসুক! জানি না এক্ষেত্রে অন্যরা কী করবে। তবে আমি বলতে চাই, এদেশে ওয়ার্কার্স পার্টি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য টিকে থাকা অবস্থায় আমেরিকা ও তাদের অনুচরদের এই চাওয়া কখনোই পূরণ করতে দেয়া হবে না।’

আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গির কঠোর সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম এই নেতা বলেন, ‘৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জয়লাভ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দল আমরা করতাম না, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও বাংলাদেশে অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তিনি যখন কথা বলেছিলেন, ৭ মার্চের ভাষণ যখন দিয়েছিলেন, তখন তার সেই আদর্শ ও নীতিকে আমরা সমর্থন করেছিলাম। আজও করি। সত্তরের সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানিরা তাকে ক্ষমতয় বসতে দেয়নি। বরং তারা বাংলাদেশের মানুষের ওপরে অস্ত্র নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছিল। এই আমেরিকা সেদিন কাদের সমর্থন করেছিল? তারা কি সেদিন বাঙালিদের সমর্থন করেছিল? তারা পাকিস্তানিদেরকে সমর্থন করেছিল। তাহলে খুব পরিষ্কার, আমেরিকার কোনো নীতি ও আদর্শ বলতে কিছু নেই। তারা শুধু চাই একটি রাষ্ট্রকে গোলাম বানিয়ে রাখতে। আমরা বলতে চাই, এই দেশ সূর্যসেনের দেশ। এই দেশের মানুষ লড়াই করতে জানে। লড়াই করেই এদেশের মানুষ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সেদিনও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। আজকেও হবে না।

২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ‘নির্বাচন কোন সহজ জিনিস নয়। আমরা নির্বাচন করি শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা। আমার বন্ধু রাজনৈতিক দলগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আগামী নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই। বাংলাদেশকে রক্ষার লড়াই। এ লড়াইয়ে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আদর্শ ও চেতনার প্রেক্ষিতে লড়তে পারি, তবেই কেবলমাত্র শুত্রুপক্ষকে পরাজিত করা সম্ভব। অন্যথায় সম্ভব নয়!’

তিনি বলেন,  ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা মনে রাখা উচিত। বিএনপি-জামায়াত আবারও সেদিনের মতো নির্বাচন বয়কটের কথা বলছে। ১৪ সালে নির্বাচন বয়কটের কথা বলে তারা কি করেছে? আপনারা কী ভুলে গেছেন? তারা নির্বাচন বয়কটের কথা বলে স্কুল পুড়িয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়েছে, গণপরিবহন পুড়িয়েছে, মানুষও পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এই হচ্ছে ফ্যাসিবাদি শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এটাই সামরিক শক্তির মাধ্যমে ক্যান্টনমেন্টে গড়ে তোলা রাজনৈতিক দলের আদর্শের বৈশিষ্ট্য।’

ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধানতম এই নেতা বলেন, ‘রাজশাহীতে যখন করোনা মহামারির দাপট চলছিল, তখন অনেকেই সেদিন ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছিল। আজকের বিএনপি-জামায়াতকে সেদিন মানুষের সঙ্গে দেখা যায়নি। সেদিন রাস্তায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীরাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছিল। জামিল ব্রিগেড গঠন করে তারা করোনায় আক্রান্ত মানুষকে নিজের কোলে তুলে মেডিকেলে ভর্তি করেছিল। পরিবারের লোকজনও যেদিন করোনারোগীর পাশে দাঁড়ায়নি, ওয়ার্কার্স পার্টি সেদিন পরিবার হয়ে তাদের জীবন রক্ষায় এগিয়ে গেছিল। রাজশাহীর মানুষ এসব ভুলে যায়নি আশা করি।’

মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বাদশা বলেন, ‘পার্টির নেতাকর্মীদের বলতে চাই, আপনারা অতীতেও যেমন মানুষের সঙ্গে ছিলেন, আগামীতেও আপনাদের মানুষের পাশে থাকতে হবে। আজকের সভার মধ্যদিয়ে আমাদের কাজ শেষ নয়, বরং এখন থেকেই শুরু। আপনারা এখান থেকে বেরিয়ে জনগণের কাছে ফিরে যাবেন। তাদের কথা শুনবেন। তারা যেন আপনাদের নিজেদের মানুষ ভাবতে পারে, সেই কাজটিই বেশি করে করবেন। ওয়ার্ড পর্যায়ে পার্টির মহল্লা কমিটিগুলো পুনর্গঠন করুন। এলাকায়-এলাকায় কর্মীসভার আয়োজন করুন। আমি নিজে সেসব সভায় উপস্থিত থেকে মানুষের কথা শুনবো। মনে রাখবেন, আমরা সেই পার্টি, যারা কখনোই মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে বেইমানি করিনি। আমি বিশ্বাস করি, আগামীদিনে যেকোন লড়াই করার মতো মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক সক্ষমতা রয়েছে।’

মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকুর সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় জেলা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাদরুল ইসলাম, সিরাজুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, আইনজীবী আবু সাঈদ, আব্দুল মতিন, নাজমুল করিম অপু, মনির উদ্দীন পান্না, যুবমৈত্রীর সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিসহ মহানগর কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ, মহানগর যুবমৈত্রী, মহানগর ছাত্রমৈত্রী, জেলা নারী মুক্তি সংসদ, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনসহ থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজন নেতা এমপি ফজলে হোসেন বাদশার উপস্থিতিতে মঞ্চে বক্তব্য রাখেন। বর্ধিত সভাটি সঞ্চালনা করেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু।

সোনালী/জগদীশ রবিদাস