ঢাকা | মে ৪, ২০২৪ - ৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

মজুরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় শ্রমিকেরা

  • আপডেট: Friday, April 7, 2023 - 12:09 am

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ আট মাস ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রাজশাহী রেশম কারখানার শ্রমিকেরা। মজুরি পরিশোধের দাবিতে কারখানার গেটের সামনে একাধিকবার আন্দোলন করতেও দেখা গেছে তাদের। শ্রমিকেরা বলছেন, আট মাস ধরে মজুরি না পাওয়ায় তারা অনেকটাই অসহায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে আসন্ন ঈদ উদ্‌যাপন করবেন, তা নিয়েও রয়েছে দুশ্চিন্তা।

এদিকে, শ্রমিকদের মজুরি থেকে বঞ্চিত করা ‘অমানবিক’ মন্তব্য করে আগামী ঈদের আগেই তাদের সব বকেয়া পরিশোধ করতে মন্ত্রণালয়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সহ-সভাপতি ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। অন্যদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের আগে শ্রমিকদের আপাতত তিন মাসের বেতন দেওয়া হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

রেশম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দুপুরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাজশাহী রেশম কারখানার শ্রমিকদের ছয় মাসের বকেয়া মজুরির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন বোর্ডের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। এসময় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর‌ উপস্থিতিতে রেশম শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্তের তিন মাস পার হলেও আমলাতান্ত্রিক বিভিন্ন জটিলতা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক ‘কোয়ারির (প্রশ্ন)’ কারণে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আটকে আছে।

কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয় রাজশাহী রেশম কারখানা। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক। তবে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম বোর্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেন। তার প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালের ২৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৫টি লুম চালু করা হয়। এরপর আরো ১৪টি লুম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। সবশেষ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি মোট ১৯টি লুম নিয়ে রাজশাহী রেশম কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাপড় উৎপাদন শুরু হয়। কিছু সময় ভালোভাবেই চলার পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখানে রেশম শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না।

কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আট মাস ধরে মজুরি না পেয়ে তারা অনেকটাই নাকাল অবস্থায় পড়েছেন। শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে তাদের একজন কর্মীর সন্তানও মারা গেছে। দোকানপাটে তাদের এখন আর বাকি দেয়া হয় না। বিল না দেওয়ার কারণে বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন শ্রমিকেরা।

এ নিয়ে জানতে চাইলে বিষ্ময় প্রকাশ করে এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তিন মাস আগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সভায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আসার আগেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এটি আটকে আছে। রেশম বোর্ডের দায়িত্বে শ্রমিকদের স্বার্থে যা-যা করণীয় আমরা সবকিছুই করেছি। এখন এটি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছে। ঈদের আগেই অসহায় এ শ্রমিকগুলোর বকেয়া বেতন যাতে পরিশোধ করা হয়, এর জন্য আমি তাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. আনওয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সম্মতি প্রয়োজন হয়। তারা অনেক ‘কোয়ারি (প্রশ্ন)’ করে। সর্বশেষ তাদের তিনটি কোয়ারির জবাব দেওয়া হয়েছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিশেষভাবে অনুরোধও করা হয়েছে। আশা করছি, ঈদের আগেই শ্রমিকদের আপাতত তিন মাসের মজুরি ছাড় হতে পারে।

সোনালী/জেআর