ঢাকা | মে ৪, ২০২৪ - ৪:৩১ অপরাহ্ন

বই পৌঁছেনি অনেক স্কুলে

  • আপডেট: Saturday, December 31, 2022 - 11:06 am

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বই গতকাল পর্যন্ত পৌঁছায়নি। নাম প্রকাশ না করে প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের স্বল্পতা আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো বই-ই আসেনি। আজ শনিবারের মধ্যে বইগুলো না এলে এসব শিক্ষার্থীকে বছরের শুরুতে নতুন বই দেওয়া সম্ভব হবে না। শুধু ভিকারুননিসা নয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুলগুলোতে নতুন বইয়ের স্বল্পতা রয়েছে। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু অনেক স্কুলে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কোনো বই-ই পৌঁছায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল সারা দেশে উৎসব করে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে বই উৎসবের এই দিনে সব বই পাবে না ছাত্র-ছাত্রীরা। আংশিক বই দিয়েই হবে উৎসব। কোনো কোনো বই পেতে জানুয়ারি পেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সব শ্রেণির বইয়েই মানের ব্যাপারে কিছুটা ছাড় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব বইয়ের নিম্নমান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা।

যশোর সদরের আমবটতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসীন আলী বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণির কম-বেশি বই পেলেও ষষ্ঠ শ্রেণির কোনো বই পাইনি। কীভাবে বই উৎসব করব বলতে পারছি না। অন্য কোনো শ্রেণিরও পূর্ণাঙ্গ সেট পাইনি।’ তিনি জানান, এ জেলার প্রায় সব স্কুলেই একই অবস্থা। জেলা সদরের ছাতিয়ানতলা চূড়ামনকাঠি মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘সপ্তম শ্রেণির চারটি বই পেয়েছি। তবে ষষ্ঠ শ্রেণির কোনো বই পাইনি।’ রূপদিয়া ওয়েলফেয়ার একাডেমির প্রধান শিক্ষক বি এম জহুরুল পারভেজও জানালেন একই কথা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরাও জানান স্কুলগুলোতে প্রয়োজন মাফিক বই না পাওয়ার কথা।

চট্টগ্রাম থেকে প্রতিবেদক জানান, নতুন বইয়ের উৎসব থেকে বঞ্চিত হবে চট্টগ্রামের অর্ধেক শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম বলেন, নতুন শিক্ষা বছরে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৩টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত এসেছে চাহিদার ৫০ শতাংশের ওপরে। আনোয়ারার পীরখাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরশাদ হোসাইন বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো বই এখনো পাওয়া যায়নি। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিরও পুরো সেট আসেনি। চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮১ জন। এসব শিক্ষার্থীর জন্য বই প্রয়োজন ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯০৩টি।

এ পর্যন্ত বই পাওয়া গেছে প্রায় ৭০ লাখ। খুলনা থেকে প্রতিবেদক জানান, চাহিদার বিপরীতে আশানুরূপ নতুন বই এখনো খুলনায় পৌঁছায়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, খুলনায় বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ২৩১টি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪১টি বই এসেছে। চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৩০ শতাংশ বই পাওয়া গেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র বলছে, বই উৎসবের লক্ষ্যে আজকের মধ্যে (৩১ ডিসেম্বর) ৮০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। বাকি বই ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দেওয়া হবে। বই ছাপা কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি অনেক স্কুলে বই না পৌঁছানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বই ছাপা কার্যক্রম ধীরগতিতে চলার পাশাপাশি বইয়ের মান নিয়েও হতাশাব্যঞ্জক মন্তব্য করেছেন শিক্ষকসহ মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতারাও। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এবারের বইয়ের মান খুব খারাপ। এত নিম্নমানের বই ২২ বছরে দেখিনি। এ ছাড়া অনেক স্কুলে এখনো বই যায়নি। কেউ বই পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। বই না থাকলে উৎসব হবে কীভাবে! বই না পাওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।’

বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, রবিবার (কাল) সারা দেশে বই উৎসব হবে। কিন্তু শনিবারের (আজ) মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক মিলে প্রায় ৫৫ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের পুরো সেট বই পেতে এপ্রিল-মে পর্যন্ত লেগে যাবে। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সুপারিশে দুটি ছাপাখানাকে বড় কাজ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর ছাপাকাজ নিম্নমানের। কাজেও বিলম্ব হচ্ছে। ওপরের চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রশাসনিক অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।’ চেয়ারম্যান শক্তভাবে সবকিছু মনিটরিং করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেরিতে চুক্তি হওয়া, মাধ্যমিকের কয়েক শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রেও দেরিতে চুক্তি করা, কাগজ সংকট, পাল্প সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পাঠ্যবই ছাপা বাদ দিয়ে নোট-গাইড ছাপানো ইত্যাদি কারণে বই ছাপতে বিলম্ব হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বছরের শুরুতে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

বই ছাপার টেন্ডার দেওয়ার পর কাগজের দাম বেড়েছে, কাগজের সংকটও বেড়েছে। তাই মান শতভাগ রক্ষা করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৪৩ লাখ ৯২ হাজার ১৯টি, ইবতেদায়িতে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার ১৪৪টি, দাখিল স্তরে ৪ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮টি, মাধ্যমিক স্তরে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫টি বই বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্তরের বইসহ সব মিলিয়ে ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার ৬৫৭ কপি নতুন বই ছাপানো হচ্ছে।

সোনালী/জেআর