ঢাকা | মে ৩, ২০২৪ - ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন

১৫ আগস্টের অনেক কিছুই জানি, বলতে পারছি না

  • আপডেট: Thursday, September 1, 2022 - 11:06 am

অনলাইন ডেস্ক: পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার চক্রান্তের পেছনের অনেক কিছু জানলেও তা বলতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজে নীলকণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক জানি বলতে পারব না, বলি না। আমার একটাই লক্ষ্য দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। এটা যখন সার্থকভাবে করতে পারব তখনই আমার অনেক কিছু বলার সুযোগ আসবে।’

পনেরো আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত এক সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

জাতীয় সংসদে সাধারণ প্রস্তাবটি আনেন সরকারি দলের সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তার প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এই মহান সংসদের অভিমত এই যে, যে ঘৃণ্য খুনিচক্র ও চক্রান্তকারী গোষ্ঠী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি। কিন্তু চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনও ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে। তাদের এই ঘৃণ্য চক্রান্তকে সফল হতে দেওয়া যায় না।

ইতিহাসের পাদদেশে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা, বাঙালির মহত্তম ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদকে বিনম্রচিত্তে ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি এবং বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেওয়ার শপথ গ্রহণ করছি, ২০২২-এর আগস্ট মাসে একাদশ জাতীয় সংসদের ঊনবিংশতম অধিবেশনে এই হোক প্রত্যয় দৃঢ় ঘোষণা।’ এই প্রস্তাবের ওপর সরকারি দল ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য আলোচনায় অংশ নিলেও বিএনপির কেউ তাতে অংশ নেননি। বিএনপিদলীয় সদস্যদের কেউ অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে প্রস্তাবটি ভোটে দিলে সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মধ্যে যারা দেশে ছিল বিচার করা হয়েছে। তিনজনকে দেশের বাইরে থেকে আনা হয়েছে। কর্নেল নুর কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায়, রশিদ লিবিয়ায়, পাকিস্তানেও থাকে। তাদের আনার চেষ্টা চলছে। এরা আমাদের মানবাধিকারের কথা শোনায়। আর খুনিদের লালন-পালন করে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। তবে এ ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।

জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এই খুনের সঙ্গে কারা জড়িত সেটা তো স্পষ্ট। আমি তো সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছি। কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নিতে যাইনি। কারণ বিচারে বিশ্বাস করি। বিচারের মধ্য দিয়েই চলেছি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার হয়েছে। অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এই চক্রান্তটা তো শুধু হত্যাকাণ্ড নয়। চক্রান্তটি আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত আমার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এ চক্রান্ত আমাদের আদর্শের বিরুদ্ধে। এই চক্রান্তের পেছনে কারা- বোধহয় সেটাও খুঁজে বের করার সময় এসেছে।

এ হত্যার চক্রান্তকারীদের বের করে জাতির সামনে তাদের চেহারা উন্মুক্ত করা দরকার। আমরা শেষ করে যেতে পারব কিনা? মনে করি এক দিন না এক দিন সেটা নিশ্চয়ই বের হবে। এক দিন না এক দিন নিশ্চয়ই প্রকাশ হবে। তিনি আরও বলেন, তবে, হ্যাঁ, জানি অনেক কিছুই কিন্তু… আমি তো বলেছি সব ব্যথা, সবকিছু ধারণ করেই যত শোক সব বুকে নিয়েই আমার পথচলা।

এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উদ্ঘাটনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বিরোধীদলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কালো অধ্যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে কিনা, তাঁর জানা নেই।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দাবি করেন, জিয়াউর রহমান এবং খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলামও দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত। সরকারি দলের আরেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের কমিশনের মাধ্যমে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সোনালী/জেআর