ঢাকা | জুলাই ২৭, ২০২৪ - ৫:৪১ পূর্বাহ্ন

সমস্যা নিরসনে ঢাকার সঙ্গে আলাদা ব্যবস্থা চায় ওয়াশিংটন

  • আপডেট: Wednesday, May 18, 2022 - 8:38 pm

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিরসনে ঢাকার সঙ্গে আলাদা ব্যবস্থা বা মেকানিজমের প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন। প্রতি তিন মাস পরপর দুই দেশের কর্মকর্তারা বসে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনে আলোচনা এবং দুই দেশের সংলাপগুলোর হালনাগাদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে দুই দেশের এ ধরনের ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব ও ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গত কয়েক মাসে আমরা বেশ কিছু দ্বিপক্ষীয় সংলাপ করেছি। সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী জুন মাসে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সম্পর্ককে গভীর করতে প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানতে চাইলে ডি হাস বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। তবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা বড় পরিসরে সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।’

এদিকে বিকেলে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ছিল। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত সামনে দুই দেশের অর্থনৈতিক সংলাপ রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, আগামী ২ জুন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এ ছাড়া যে সংলাপ হয়েছে দুই দেশের মধ্যে এবং সামনে যে সংলাপ রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি সময়ে সময়ে পর্যালোচনার জন্য একটি ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ ছাড়া ‍দুই দেশের বিদ্যমান ইস্যুগুলোতে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলোর নিয়মিত পর্যালোচনার ব্যবস্থা করতে এ প্রস্তাব। এ ব্যবস্থা জুলাই মাস থেকে শুরু করা হবে।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এ ব্যবস্থা বাংলাদেশের অনেক দেশের সঙ্গেই রয়েছে। জাপান, ভারতসহ অনেক দেশের সঙ্গে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের প্রস্তাব করেছে। আমরা নীতিগতভাবে কোনো সমস্যা দেখি না। কারণ শুধু সংলাপ করেই গেলাম, এর ফল কি এসেছে সে বিষয়টি সময়ে সময়ে দেখা দরকার।’

র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বৈঠকে এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আইনি যে ব্যবস্থাগুলো রয়েছে, তা বাংলাদেশ পর্যালোচনা করছে।’

আসন্ন অর্থনৈতিক সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘অর্থনীতি বিষয়ক যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন মার্কিন বিনিয়োগ, বাংলাদেশের রপ্তানি ও এ প্রাসঙ্গিক যত বিষয় রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সময়ে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে বিশেষ করে শ্রম ইস্যু, ট্রেড ইউনিয়ন ইস্যুগুলো সাইড লাইনে আলোচনা হবে।’

র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক সংলাপে আলোচনা হবে কি না? জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমার মনে হয় না এ সংলাপে এটি আসবে। তবে সাইড লাইনে হতে পারে।’

শ্রম মান নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে কাজ করছি। আমরা এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপ দিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যা ২০২৩ এর মধ্যে আমরা বাস্তবায়ন করব। বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে যা করণীয় তা বাংলাদেশ করছে।’

জিএসপি না থাকায় মার্কিন ডিএফসি তহবিল না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এ বিষয়গুলো অর্থনৈতিক সংলাপে আলোচনা হবে। জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি বাংলাদেশ সংলাপে তুলবে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু উদ্বেগ রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়ন, শিশু শ্রম, ইউনিয়ন করার অধিকার, হুমকিসহ বেশি কিছু বিষয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে। এর সবগুলো যে আমরা মেনে নেই বিষয়টি এমন নয়। কিছু বিষয়ে আমরা করোনার কারণে পিছিয়ে রয়েছি। তবে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

ডিএফসি তহবিল নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এ তহবিল ছাড়া আমাদের খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। এ তহবিল না পেয়ে বাংলাদেশ বিপদগ্রস্ত রয়েছে, বিষয়টি তো সে রকম নয়। আমাদের বাড়তি সুবিধা থাকলে এ তহবিলে আমাদের অগ্রাধিকার থাকবে। আমরা ভালোই আছি।’