সজনের বাম্পার ফলন চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে সারাদেশে
মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: দুর্গাপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে এখনও বড় ধনের প্রাকৃতি দুর্যোগ ঝড়ঝাপ্টা হয়নি। ফলে একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এবার সজনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত সজনে এখন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার গুলো ভরপুর।
রাস্তার ধার, জমির আইল, ফসলের মাঠ ও বাড়ির আঙিনায় কম খরচে উৎপাদন ও পরিচর্যা কম হয় বলে বলেই কৃষকরা সজনে চাষে আগ্রহী। উৎপাদিত সজনে উপজেলা ও জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় সজনেতে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।
দুর্গাপুরের হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কৃষকদের কাছে থেকে সজনে কিনছেন। দুপুর নাগাদ ক্রয়কৃত সজনে ব্যবসায়ীরা আঁটি বেধে ট্রাকে তুলছেন। ব্যবসায়ীদের ক্রয়কৃত সজনে ঢাকা, জামালপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর শুরুতে উপজেলার প্রায় হাটে-বাজারে ৯০ টাকা থেকে ১০০টাকা কেজি দরে বিক্রয় হয়েছে। এখন ভরা মৌসুমে উৎপাদন বেশি হওয়ায় প্রাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০টাকা কেজি দরে।
ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী রুহুল মণ্ডল বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন থেকে এ অঞ্চল থেকে সজনে কিনেন। দুর্গাপুর উপজেলার না, রাজশাহীর চারটি উপজেলা থেকে প্রতিবছর কৃষকদের থেকে সজনে কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। তিনি বলেন, এ বছর রমজান মাসে সজনের দাম ভাল ছিল। এখন ভরা মৌসুম উৎপাদন বেশি হচ্ছে। এ কারণে একটু দাম কমেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে সজনে কিনে ট্রাকে করে ঢাকার কাওরানবাজারে পাঠিয়ে দেন। কাওরান বাজারে তার ছোটভাই কাঁচামালের ব্যবসা করেন। এখন বাজারে সজনে একটু কম পাওয়া গেলেও সপ্তাহে খানেক পর পর্যাপ্ত সজনে পাওয়া যাবে। এবার দামও ভাল পাচ্ছে কৃষকরা।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের সখিনা বিবি বলেন, রমজান মাসের শুরুতে ১০০ টাকা কেজি দরে সজনে বিক্রি করেছেন। এখন বাজারে প্রচুর সজনে পাওয়া যাচ্ছে। দাম একটু কমে গেছে। রাস্তার ধারে পতিত জমি থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার টাকার সজিনা বিক্রি করেছেন। এছাড়াও পরিবারসহ আত্মীয় স্বজনকেও দিয়েছেন। রাস্তার ধারে নিজের জমির সীমানায় তাঁর প্রায় ২০টি সজনে গাছ আছে। এক মাস ধরে প্রতিহাট বারেই সজনে বিক্রি করছেন।
বাদইল গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সজনে গাছের কাঠ হালকা ও নরম। একটু জোড়ে বাতাস বা ঝড় হলে ভেঙে পড়ে। এ কারণে সজনে গাছ লালন পালন করা খুব কঠিন। পরিবারের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনা দিয়ে কিছু গাছ লাগিয়েছেন। এবছর সেসব গাছে পর্যাপ্ত সজনে এসেছে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয় স্বজনদের দিয়েছেন উৎপাদিত সজনে। এছাড়া বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকাও পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ সজনে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাড়ির গৃহিনী ও বাড়ির আশেপাশে বেশি সজনে গাছ লাগিয়ে থাকেন। জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে সজনের চাষ বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ কৃষকরাই বাড়িতে খাওয়ার উদ্দ্যেশে লাগিয়ে থাকেন। যখন প্রচুর উৎপাদন হয়। তখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন।