ঢাকা | অক্টোবর ৮, ২০২৪ - ৪:১৮ পূর্বাহ্ন

বৈশাখী মেলায় উঠছে সুশান্ত পালের শখের হাঁড়ি

  • আপডেট: Tuesday, April 12, 2022 - 7:27 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বৈশাখী মেলার অনেক আগে থেকেই সুশান্ত কুমার পালের বাড়িতে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বাড়ির সবাই মন দেন মাটির শখের হাঁড়ি তৈরিতে। পয়লা বৈশাখেই সুশান্ত পাল তাঁর শখের হাঁড়ির পসরা সাজান বৈশাখী মেলায়। কিন্তু গেল দু’বছর মহামারী করোনার প্রকোপে বৈশাখী মেলা হয়নি। সুশান্ত পালেরও মেলায় যাওয়া হয়নি। তবে এবার সুশান্ত মেলায় যাচ্ছেন।

তাই শেষ মূহুর্তে তাঁর বাড়িতে এখন রং-তুলির আঁচড়ে শখের হাঁড়িগুলো রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে। সুশান্ত পালের স্ত্রী, দুই ছেলে আর পূত্রবধূরাও এখন এ কাজে ব্যস্ত। আগামী বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে বৈশাখী মেলায় থাকবে সুশান্তের শখের হাঁড়ি। এ ছাড়া সোনারগাঁও জাদুঘর প্রাঙ্গনেও বৈশাখী মেলায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পাওয়া যাবে এ হাঁড়ি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে সুশান্ত পালের বাড়ি। তিনি শখের হাঁড়ি তৈরির কারুশিল্পী হয়েছেন বংশগতভাবেই। তার বয়স এখন ৬১। প্রায় ৩২ বছর ধরে তৈরি করছেন শখের হাঁড়ি। নিভৃত পল্লীর এই কারুশিল্পীর নাম ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে ‘শখের মৃৎশিল্প’ শিরোনামের একটি প্রবন্ধের সঙ্গে ছাপানো হয়েছে সুশান্ত পালের ছবি। সরকারি খরচে দেশের প্রতিনিধি হয়ে তিনি গিয়েছেন বিদেশেও।

কারুশিল্পের এক প্রদর্শনীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হয়ে ২০১৩ সালে সুশান্ত পাল ঘুরে এসেছেন জাপান। একাধিকবার দেশের সেরা কারুশিল্পীর পুরস্কারও পেয়েছেন। কারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদ, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, কারিকা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনসহ (বিসিক) বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সনদ রয়েছে তাঁর।

শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন-২০১১ স্বর্ণপদক পান সুশান্ত পাল। বিসিক নকশা কেন্দ্রের ‘আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা’ জাতীয় মৃৎশিল্প প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। আর বিসিক সুশান্ত পালকে দুবার শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী নির্বাচিত করেছে। সুশান্ত পালের ছেলে সঞ্জয় কুমার পালও সরকারি খরচে ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। কারুশিল্পের আরেক প্রদর্শনীতে ২০২০ সালে গিয়েছেন নেপাল।

দেশে যেখানেই কারুশিল্পের মেলা বা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় সেখানেই সুশান্ত পাল আর তার দুই ছেলেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অসংখ্য প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তারা। সবশেষ গত মার্চে তিনদিন ও ছয়দিনের দুটি মেলায় অংশ নিয়ে এসেছেন। তবে তাতে মন ভরেনি। শুধু বৈশাখী মেলা তাদের বিশেষভাবে টানে। গত দুবছর বৈশাখী মেলায় যেতে না পেরে তাদের মন খারাপ ছিল। এবার মেলায় অংশ নিতে পারছেন ভেবে তাদের ভাল লাগছে। যদিও রোজার কারণে বিক্রি তেমন জমবে না বলেই তারা মনে করছেন।

সুশান্ত পাল কাজ শিখেছিলেন তার বাবা ভোলানাথ কুমার পালের কাছে। আর সুশান্তকে দেখে দেখে কারুশিল্পী হয়ে উঠেছেন তার দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল। সুশান্তের স্ত্রী মমতা রানী পাল এবং দুই ছলের স্ত্রী মুক্তি রানী পাল ও করুণা রানী পালও এখন কারুশিল্পী। গত শুক্রবার তাদের বাড়িতে গিয়ে সবাইকেই শখের হাঁড়ি নিয়ে কাজ করতে দেখা গেল।

বাড়ির আঙিনায় রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে কিছু হাঁড়ি। আর উঠোন এবং ঘরের মেঝেতে ভরা ছোট-বড় হাঁড়ি, সাজি, পঞ্চসাজি, চুকোই, মাটির পুতুল, ঘোড়া, চার ও সাত ধরনের খেলনার সেট, মাটির কাপ-পিরিচ, সরাসহ অন্যান্য মাটির তৈজসপত্র। তিন বাবা-ছেলে রং-তুলির আঁচড় দিচ্ছিলেন সেসবে। সুশান্ত জানালেন, তিনমাস আগে সোনারগাঁও মার্কেটে এক হাজার টাকা ভাড়ায় একটি দোকান বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিন বাবা-ছেলে পালাকরে সেই দোকানে থাকেন। মেলা শুরুর আগেই তিনি দোকানে যাবেন। তারপর স্টলের প্রস্তুতি নেবেন। বৈশাখী মেলায় সুশান্ত ও ছেলে সঞ্জয় থাকবেন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে। আরেক ছেলে মৃত্যুঞ্জয় থাকবেন সোনারগাঁও জাদুঘরের বৈশাখী মেলায়।

মৃত্যুঞ্জয় বললেন, এবারও মেলা হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। অল্প সময় আগে তাদের জানানো হয়েছে। নতুন করে জিনিসপত্র বানানোর সময় পাওয়া যায়নি। বাড়িতেই যা মজুত ছিল সেগুলো নিয়ে যাবেন। এ জন্য নতুন করে রং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘রোজার মাসে মেলা জমবে না। দু’তিন দিনের মেলায় ব্যবসাও হবে না। তাও দু’বছর পর বৈশাখী মেলায় যাচ্ছি বলে আনন্দ লাগছে।’