ঢাকা | মে ৩, ২০২৪ - ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

টিপুকে হত্যার জন্য আকাশকে কারা ভাড়া করেছিল?

  • আপডেট: Sunday, March 27, 2022 - 6:18 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার জন্য মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে ভাড়া করা হয়েছিল। তাকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয় ঘটনার পাঁচ দিন আগে। দুই দিনের চেষ্টায় মিশন সফল করেন আকাশ। এই মিশনে কারা তাকে অস্ত্র দিয়েছিল এবং কারা খুনের মদদদাতা?

টিপু ও প্রীতি খুনের অভিযুক্ত আকাশকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য বলছে, টিপু হত্যাকাণ্ডে আকাশের অংশ নেওয়া শুধু আর্থিক সুবিধার জন্যই নয়, তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে, সেসব মামলা থেকে রেহায় পাইয়ে দিতে তাকে চুক্তিতে ভাড়া করে কোনো পক্ষ।

নিহত টিপুর স্ত্রী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলির দাবি, ‘টিপুর সঙ্গে একজন শ্যুটারের বিরোধ থাকার কথা না। কেউ তাকে দিয়ে হত্যার কাজটি করিয়েছে। ঘটনার নির্দেশদাতা বা পরিকল্পনাকারীদের ধরা হোক।’

দলীয় বিরোধ এবং হত্যার পেছন বেশ কজন আছেন বলে সন্দেহ টিপুর স্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘শুধু খুনিদের নয়, পেছনের মাফিয়াদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে। পুরনো কোনো ইস্যু সামনে এনে যাতে আসল ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা না হয়।’

ডলি বলেন, ‘অ্যান্টি গ্রুপ তো থাকেই, যেহেতু এত বড় একটি দলের নেতা ছিলেন তিনি, বিরোধী গ্রুপ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাজ করলেই শত্রু হয়। পরিকল্পনা ছাড়া এত বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।’

ব্যাংকপাড়ায় টেন্ডার এবং ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল

একটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার যুবলীগের সাবেক নেতা সম্রাট ও খালেদের একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন টিপু। সম্রাট ও খালেদ জেলখানায় যাওয়ার পর টিপু এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। টিপুকে ঠেকাতে আলাদা বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন স্থানীয় একজন নেতা। বিশেষ করে মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্লাবগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে মতিঝিল এলাকায় একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। টিপু এমন কোনো চক্রের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। তাদের দ্বন্দ্বের বিষয় এলাকার অনেকে জানেন। তদন্তসংশ্লিষ্টদের ধারণা, টিপু হত্যাকাণ্ডে ওই চক্রটি জড়িত থাকতে পারে।

কে বা কারা ভাড়া করেছিল এই খুনিকে, জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শ্যুটার আকাশকে গ্রেপ্তারের পর আমরা গণমাধ্যমের সামনে হাজির করেছি। যতটুকু তথ্য দেওয়া সম্ভব ততটুকু জানানো হয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।’

কে এই আকাশ

এলোপাতাড়ি গুলি করে পালানোর পর ফেসবুকে টিপু ও প্রীতির মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন শ্যুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। রবিবার বগুড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর ডিবিকে এসব তথ্য জানান তিনি।

গ্রেপ্তার মাসুম আকাশ চাঁদপুরের মতলব থানার বাইশকানি গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। রাজধানীর সবুজবাগ থানার পশ্চিম মাদারটেকের ৬০/১৫ নম্বর বাসায় থাকেন তিনি। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। শ্যুটার আকাশ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিকস ডিজাইনের ওপর পড়াশোনা করেন। তার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক।

আকাশ অপরাধজগতে জড়িয়ে একটি হত্যা মামলাসহ চার-পাঁচটি মামলার ফেরারি আসামি। এসব মামলা থেকে বাঁচানো ও নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে তাকে টিপু হত্যার জন্য রাজি করানো হয়। তবে কারা তাকে ভাড়া করেছিলেন, সেই তথ্য সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ডিবি।

আকাশকে গ্রেপ্তারের পর আজ সংবাদ সম্মেলনে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, টিপু মতিঝিল এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। অনেকগুলো বিষয় এই হত্যার পেছনে রয়েছে। তবে পূর্বপরিকল্পিত এই হত্যার ‘মোটিভ’এখনো জানা যায়নি।

সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা ছিল আকাশের

বৃহস্পতিবার ঘটনার পরদিন রাতে ঢাকা থেকে একটি গাড়িতে করে জয়পুরহাটে যান আকাশ। সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। তবে সেদিন যেতে না পেরে তিনি বগুড়া চলে আসেন। যে গাড়িতে তিনি জয়পুরহাটে গিয়েছিলেন, সেই গাড়ির লোকজন ঢাকা আসার পর তাদের নিয়ে বগুড়া যায় পুলিশ। পরে বগুড়া জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে।

একাধিক দিন অনুসরণ করে টিপুকে হত্যা

আসামির বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, আকাশ ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার টিপুকে তার রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় যাওয়ার পথে অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু লোকজন বেশি থাকায় সেদিন ব্যর্থ হন। ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আকাশকে জানায়, টিপু তার অফিসে (রেস্টুরেন্ট) অবস্থান করছেন। এই সংবাদ পেয়ে আকাশ দ্রুত টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে টিপু বেরিয়ে এলে তাকে গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেন। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করতে থাকেন আকাশ।

টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেললাইনের আগে আমতলাসংলগ্ন রাস্তায় যানজটে আটকা পড়লে আকাশ গাড়ির ড্রাইভারের পাশের আসনে বসা টিপুকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি করে পালিয়ে যান।

পরবর্তী সময় তার দুই বন্ধুর সহযোগিতায় নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে চলে যান। পরে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন রিকশারোহী প্রীতি এবং টিপুর মৃত্যুর সংবাদ।