প্রাচীরচাপায় প্রাণ গেল এক শ্রমিকের, আহত ৫
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মহানগরীতে কাজ করার সময় সীমানা প্রাচীরের নিচে চাপা পড়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। শনিবার দুপুর সোয়া তিনটার দিকে নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটবনগ্রাম কৌটা পুকুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিয়াজুল ইসলাম (৩৫)। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বালিয়াডাইং গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম মাহাতাব আলী। দুর্ঘটনার পর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এই হাসপাতালে মো. কাজেম (২৭), মনজুর (৩৫), এনামুল (৩৫) এবং ফিলিপ (২৮) নামে আরও চার শ্রমিক চিকিৎসাধীন। চাপা পড়া এই শ্রমিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে মাইনুল ইসলাম (৬০) নামের আরেক শ্রমিক আহত হয়েছেন। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত এবং নিহত সব শ্রমিকের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বালিয়াডাইং গ্রামে।
দুর্ঘটনার পর অসংখ্য উৎসুক মানুষ ভিড় করলে সব শ্রমিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আরও কেউ চাপা পড়ে থাকতে পারেন আশঙ্কা করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। একপর্যায়ে সব শ্রমিককেই পাওয়া যায়। তাই দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস অভিযান শেষ করে।
শ্রমিকদের সর্দার কাজেম আলী জানান, তিনি গোদাগাড়ী থেকে মোট ১৭ জন শ্রমিককে এনেছিলেন। দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তাঁরা এনতাজ আলী নামের এক ব্যক্তির পাঁচতলা বাড়ির ভিত কাটছিলেন। পূর্বপাশে যেখানে ভবনের ভিত কাটা হচ্ছিল তার পাশেই ছিল সীমানা প্রাচীর। আর সীমানা প্রাচীরের ওপাশে রাখা ছিল ইটের খোয়া। ভিত কাটার কারণে খোয়ার চাপে সীমানা প্রাচীরটি শ্রমিকদের গায়ের ওপরে পড়ে। এতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহত শ্রমিকদের কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা ভেঙেছে এবং কারও শরীরে জখম হয়েছে।
নির্মাণ শ্রমিক আবদুল জলিল জানান, ভিত কাটার সময় সীমানা প্রাচীরেরই ভিত থেকে মাটি সরে যায়। এতে প্রাচীরটি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন তাঁরা প্রাচীরটিতে এপাশ থেকে ঠেকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই প্রটেকশন দেওয়া হয়নি। ফলে প্রাচীরটি পড়ে গেছে। দুর্ঘটনার পর বাড়ির মালিক এনতাজ আলী ও ভিত কাটার কাজের ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেন না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর স্টেশনের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, দুর্ঘটনার পর একাধিক শ্রমিক চাপা পড়ে ছিলেন বলে শ্রমিকরাই বলছিলেন। তাই দুই ঘণ্টারও বেশি উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। ইটের খোয়া ও প্রাচীর সরিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে সব শ্রমিককেও পাওয়া গেছে। তাই অভিযান শেষ করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের (ইনসাব) জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি আজিজুল হক বাঙালী। তিনি বলেন, ‘অসচেতনতা এবং মালিকের দায়িত্বহীনতায় একজন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের শাস্তি চাই।’
নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে। নিহত শ্রমিকেরও মরদেহের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’