দোকানে মিলছে টিসিবির পণ্য
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের কালোবাজারি থামছেই না। অসাধু কিছু পরিবেশক টিসিবি কার্যালয় থেকে পণ্য তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন কালোবাজারে। এতে নায্য মূল্যে পণ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ট্রাকসেলে টিসিবির পণ্য না মিললেও বেশি দামে তা পাওয়া যাচ্ছে দোকানে।
সবশেষ গত মঙ্গলবার রাজশাহী নগরীর হড়গ্রাম এলাকার এক দোকানে টিসিবির তেল বিক্রির আলামত মিলেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় টিসিবির তেল বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ‘বকুল স্টোর’ নামের ওই দোকানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। টিসিবির সয়াবিন তেল বোতল থেকে বের করে বিক্রি করা হচ্ছিল দোকানটিতে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল-মারুফ জানান, টিসিবির বোতলসহ তেল বিক্রি করলে ধরা পড়ার ভয়ে দোকান মালিক বকুল বোতল থেকে বের করে তেল বিক্রি করছিলেন। খবর পেয়ে দোকানটিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই দোকানে দুই লিটারের ৭০টি তেলের খালি বোতল পাওয়া যায়। এ সময় দোকান মালিক বকুলকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত বছরের ১৪ জুলাই নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের সাগর ট্রেডার্স ও সুমন ট্রেডার্স নামের দুটি দোকান থেকে টিসিবির পণ্য উদ্ধার করে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল সেদিন সাগর ট্রেডার্সের মালিক মো. সাগর ও সুমন ট্রেডার্সের মালিক মো. সুমনকে গ্রেপ্তারও করেন। এদের দোকান থেকে জব্দ করা হয়েছিল টিসিবির এক হাজার ২০২ লিটার সয়াবিন তেল, ১৭৫ কেজি চিনি ও ৪০ কেজি মসুর ডাল। সাগর ও সুমন ডিবি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, রেজাউল করিম নামে টিসিবির এক পরিবেশক তাঁদের পণ্যগুলো দিয়েছিলেন। এরপর ডিবি পুলিশ নগরীর চণ্ডিপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে টিসিবির পরিবেশক রেজাউল করিমকেও গ্রেপ্তার করে। পরে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এর আগে গত বছরের ২৯ এপ্রিল নগরীর ঘোড়ামারা রেশমপট্টি এলাকায় মোস্তাক আহমেদ কাজল নামে টিসিবির এক পরিবেশকের বাড়ি থেকে ১ হাজার ৫২০ লিটার সয়াবিন তেল, ৩৫০ কেজি চিনি, ৩০০ কেজি মসুর ডাল ও ২০০ কেজি ছোলা জব্দ করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল-মারুফ ওই অভিযান চালান। কাজল ট্রাকসেলে টিসিবির পণ্য বিক্রি না করে নিজের বাড়ির দোকান থেকে বিক্রি করছিলেন বেশি দামে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। একইসঙ্গে জব্দ করা হয় টিসিবির পণ্য। পরে কাজলের লাইসেন্স বাতিল করে টিসিবি।
এদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্দ্ধগতির কারণে রমজানের আগে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে টিসিবির ট্রাকের কাছে। তবে লম্বা সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকেই পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, এক শ্রেণির ক্রেতা টিসিবির ট্রাক থেকে বার বার পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। টিসিবির পরিবেশকেরা তাদের চিনলেও বার বারই দিচ্ছেন। এই ক্রেতারা আবার বাজারের দোকানে নিয়ে গিয়ে পণ্য বেচে দিচ্ছেন। আবার পরিবেশকেরাও কালোবাজারে পণ্য বিক্রি করছেন। ফলে ট্রাকসেলে সাধারণ মানুষ পণ্য পাচ্ছে না।
বিষয়টি স্বীকার করছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হাসান আল-মারুফও। তিনি বলেন, টিসিবির পণ্য নিয়ে অনিময় হচ্ছে বলেই তো বার বার দোকানে এগুলো পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সাধ্যমত মনিটরিং করে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছি। তবে কোথাও টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে দেখলে সাধারণ ক্রেতারা আমাদের খবর দিলে ভাল হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালাতে পারি। টিসিবি কর্তৃপক্ষও জড়িত পরিবেশককে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ বিষয়ে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান রবিউল মোর্শেদ বলেন, ‘কোন পরিবেশক টিসিবির পণ্য কালোবাজারি করে ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ইতোমধ্যে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কালোবাজারি ঠেকাতে আমরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’