ঢাকা | ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ - ৯:৫২ অপরাহ্ন

দক্ষিণ এশিয়ায় ‘তাপপ্রবাহের শঙ্কা ৩০ গুণ বেশি’

  • আপডেট: Tuesday, May 24, 2022 - 8:31 pm

 

অনলাইন ডেস্ক: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো- বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানে যে বিধ্বংসী তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা আরও বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কার্যত এটি এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ জলবায়ুর একটি আভাস। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার আল জাজিরা এ খবর জানায়।

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপ ঐতিহাসিক আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে বলছে, একটি বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ প্রভাবিত করার ঘটনা বিরল, যা একশ’ বছরে একবার ঘটে।

সোমবার প্রকাশিত গ্রুপটির সমীক্ষায় দেখা গেছে, মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার বর্তমান স্তরটি সেই তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা ৩০ গুণ বেশি করে তুলেছে।

প্রাক-শিল্পযুগের স্তরের তুলনায় যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়ে যায়, তাহলে এ ধরনের তাপপ্রবাহ এক শতাব্দীতে দুইবার ঘটতে পারে এবং প্রতি পাঁচ বছরে একবার পর্যন্ত ঘটতে পারে। মুম্বাইয়ে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী অর্পিতা মন্ডল এসব তথ্য জানিয়েছেন।

অর্পিতা গবেষক গ্রুপদের সঙ্গে কাজে অংশ নেয়ার সুবাধে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এটি আসন্ন কিছুর ইঙ্গিত।’

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একটি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ পৃথিবী, যা ১০০-বছরের মধ্যে মাত্র একবার ঘটে, তা-ই পাঁচ বছর পর পর ঘটতে পারে।’

সমীক্ষা পরিচালনা করার জন্য বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশনের উপর ভিত্তি করে জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া কী পরিস্থিতি হতে পারে তার সাথে কয়েক দশক আগের মার্চ এবং এপ্রিল মাসের তাপমাত্রার ডেটা রিডিংয়ের তুলনা করেছেন।

রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের জলবায়ু ঝুঁকি বিষয়ক উপদেষ্টা রূপ সিং বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ কিছু মাত্রার গরম তাপমাত্রায় অভ্যস্ত। কিন্তু যখন এটি ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়, তখন নিত্যনৈমিত্যিক কাজকর্ম চালানো সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে।’

কার্যত, ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের সমীক্ষার ফলাফলে ঝুঁকি বিষয়ে একটু কম করেই উপস্থাপন করা হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ সম্ভবত ১০০ গুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের জ্বলন্ত তাপমাত্রা প্রতি তিন বছরে পুনরাবৃত্তি হওয়ার শঙ্কা আছে। তাপপ্রবাহের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নানা বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি পাকিস্তানে একটি হিমবাহ গলে গিয়ে বন্যা দেখা দেয়; ভারতে প্রথম দিকের তাপ প্রবাহে গম শস্যকে পুড়িয়ে দেয়। এর জেরে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্য সংকটের মধ্যে বিদেশে গম রপ্তানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

তাপপ্রবাহে বিরূপ প্রভাব পড়ে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও। সর্বশেষ তাপপ্রবাহে ভারত ও পাকিস্তানে কমপক্ষে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জলবায়ু স্কুল দ্বারা প্রকাশিত একটি নথিতে, যা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস প্রকাশ করেছে, দেখা গেছে, তাপের কারণে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মত, তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় বিশ্বকে শুধু গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে লড়াই করলে চলবে না, সেইসঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে।